দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ৩ সেপ্টেম্বর: বিপ্লবের আঁতুড়ঘর মেদিনীপুরের কিশোর বিপ্লবী-রা পেডি, ডগলাসের মতো অত্যাচারী দুই জেলাশাসক-কে হত্যা করার পর বার্জ-এর ভবলীলাও সাঙ্গ করে দিয়েছিলেন মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে! ২ রা সেপ্টেম্বর (১৯৩৩) ছিল স্বাধীনতার ইতিহাসে সেই স্মরণীয় দিন। ৮৮ বছর আগে, এই দিনেই মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠে লুটিয়ে পড়েছিলেন অত্যাচারী শাসক বার্জ! পর পর তিন বছর (১৯৩১, ১৯৩২, ১৯৩৩), তিন অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট (পেডি, ডগলাস, বার্জ) -কে খতম করে দিয়ে ফাঁসির মঞ্চে যাঁরা জীবনের জয়গান গেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বার্জ হত্যার নায়ক শহীদ অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন- ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ প্রমুখ। এই পাঁচ কিশোরের উপরই অর্পিত হয়েছিল অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট বা তৎকালীন জেলাশাসক বার্জ-কে হত্যা করার দায়িত্ব! প্রথম চার জন ছিলেন মেদিনীপুর টাউন স্কুলের ছাত্র আর মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা। আর, নির্মলজীবন হুগলি থেকে এসেছিলেন মেদিনীপুর কলেজে ভর্তি হয়ে।
বিভিন্ন তথ্যসূত্র ধরে জানা যায়, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রিভলভার চালনা শেখার জন্য অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, নির্মলজীবন ঘোষ, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, ও রামকৃষ্ণ রায় মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় যান। শিক্ষাশেষে পাঁচটি রিভলভারসহ তারা মেদিনীপুরে ফিরে আসেন। এই সময়ে মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ বিপ্লবীদের প্রতি অকথ্য নির্যাতন শুরু করলে পাঁচ যুবকের উপর বার্জ হত্যার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। ১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ সাহেব মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠে মোহামেডান স্পোর্টিং-এর বিরুদ্ধে মেদিনীপুর ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলতে নামেন। খেলা প্রাকটিসের ছল করে বল নিয়ে মাঠে নামেন অনাথবন্ধু পাঁজা ও মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত। মাঠেই দুই বন্ধু বার্জ সাহেবকে আক্রমণ করলে তিনি মারা যান। জোন্স নামে একজন আহত হন। পুলিস প্রহরী দুজনের উপর পাল্টা গুলি চালায়। এতে তাঁরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাঠেই লুটিয়ে পড়েন! অনাথবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে ‘শহীদ’ হন। মৃগেন্দ্রনাথ-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরেরদিন অর্থাৎ ৩ রা সেপ্টেম্বর তিনি শহীদ হন বলে অনেকের মত। আবার, অনেক পণ্ডিত গবেষকদের মতে, তিনিও ২ রা সেপ্টেম্বরই শহীদ হয়েছিলেন। ঘনটার অন্যতম এক প্রত্যক্ষদর্শী তথা শহীদ অনাথবন্ধু পাঁজা’র বন্ধু ও সুহৃদ তাঁর বইতে যদিও লিখে গেছেন, দশদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর শহীদ হয়েছিলেন মৃগেন্দ্রনাথ! অন্যদিকে, তাঁদের অপর ৩ সঙ্গী মেদিনীপুর কলেজ মাঠ থেকে পলায়ন করতে সক্ষম হন। এই ঘটনার পর ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন, সনাতন রায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা হয়। বিচারে ব্রজকিশোর, রামকৃষ্ণ ও নির্মলজীবনের ফাঁসি হয়। নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন এবং সনাতন রায়-এর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়।
বার্জ হত্যার এই পাঁচ নায়কের প্রত্যেকেই শহীদ হয়েছিলেন ১৭ থেকে ২২ এর মধ্যে! প্রথমজন অর্থাৎ শহীদ অনাথবন্ধু পাঁজা’র জন্ম ১৯১১ সালের ২৯ অক্টোবর, অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার জলবিন্দুতে। তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ পাঁজা। অনাথবন্ধু মেদিনীপুর টাউন স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৩৩ এর ২ রা সেপ্টেম্বর যখন শহীদ হন, অনাথবন্ধু’র বয়স তখন মাত্র ২১ বছর ১১ মাস। অপরদিকে, মেদিনীমাতার বীর সন্তান, স্বাধীন ভারতের কিশোর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু’র চেয়েও কম বয়সে ‘শহীদ’ হয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের পাহাড়িপুরের কিশোর মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু যখন “ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান” গেয়েছিলেন তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিন। অপরদিকে, ১৯৩৩ সালের ৩ রা সেপ্টেম্বর (মতান্তরে, ২ রা সেপ্টেম্বর) মাত্র ১৭ বছর ১০ মাস ১৬ দিনের মাথায় ‘শহীদ’ হয়েছিলেন বিপ্লবী মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত। গতকাল (২ রা সেপ্টেম্বর) বার্জ হত্যার নায়ক এই দুই বিপ্লবী (অনাথবন্ধু ও মৃগেন্দ্রনাথ)-কেই পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করলেন মেদিনীপুর বাসী। মেদিনীপুর ডট ইন (midnapore.in) থেকে শুরু করে অনাথবন্ধু পাঁজা মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতিরক্ষা কমিটি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। অপরদিকে, মেদিনীপুর শহরের বল্লভপুরের বাসিন্দা (মেদিনীপুর টাউন স্কুলের ছাত্র) ব্রজকিশোর চক্রবর্তী ‘র ফাঁসি হয় ১৯৩৪ এর ২৫ অক্টোবর মাত্র ২১ বছর বয়সে। মেদিনীপুর শহরের চিড়িমারসাই এর বাসিন্দা, টাউন স্কুলের অপর ছাত্র রামকৃষ্ণ রায়েরও ওই একই দিনে ফাঁসি হয়। ২২ বছর ৯ মাস বয়সে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। বিপ্লবী নির্মলজীবন ঘোষের ফাঁসি হয় পরদিন, অর্থাৎ ১৯৩৪ এর ২৬ অক্টোবর। মাত্র ১৮ বছর ৯ মাস ২১ দিনে “শহীদ” হয়েছিলেন বার্জ হত্যার অন্যতম নায়ক, মেদিনীপুর কলেজের এই ছাত্র। (সম্পাদনা- মণিরাজ ঘোষ)
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২২ নভেম্বর: আইআইটি (IIT)-র মতো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে অভাব…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ নভেম্বর: দোকান বন্ধ করে রাতেই বেরিয়েছিলেন বাইক নিয়ে।…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…