thebengalpost.net
রাত পাহারায় এলাকাবাসী :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মণিরাজ ঘোষ, ১৪ ডিসেম্বর: গা ছমছমে নিঝুম শীতের রাত! অন্ধকারের বুক চিরে মাঝেমধ্যেই ঠিকরে বেরোচ্ছে এলইডি টর্চের তীব্র আলো। কখনো কখনো হুইসেলের তীক্ষ্ণ ধ্বনি। পাকা রাস্তার উপর বাঁশের লাঠির ঠকাঠক আওয়াজ। রাত পাহারায় ঐক্যবদ্ধ গ্রামবাসীরা। না বছর বারো-তেরো আগের (২০০৮-‘০৯) সেই মাওবাদী সময় নয়! ২০২১ এর ডিসেম্বর মাস। কিন্তু, দৃশ্য খানা পশ্চিম মেদিনীপুর বাসীকে মনে করিয়ে দেয় সেই ভয়াবহ মাওবাদী স্মৃতি বিজড়িত দিনগুলোর কথাই, যখন রাত পাহারা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলবাসী। আবার, অনেকের স্মৃতিপটেই ভেসে আসছে ঠিক বছর পনেরো আগেই খড়্গপুর শহরের ইন্দা এলাকার ত্রাস রাজেশ গুপ্তা-কে ঠেকানোর জন্য পুলিশ আর এলাকাবাসীর যৌথ রাত পাহারার কথা। এবারের ঘটনাস্থল সেই খড়্গপুর শহরের পাশেই ৬০ নং জাতীয় সড়ক সংলগ্ন খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকা। জাতীয় সড়কের ঠিক পাশেই, খড়্গপুর গ্রামীণের লছমাপুর তিন নম্বর অঞ্চলের খাটরাঙা, রাধানগর থেকে বালিহাটি, জকপুর অবধি প্রায় ১২-১৪ টি গ্রামজুড়ে গত ২-৩ মাস ধরে লাগাতার চলছিল চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি। অভিনব কায়দায় কখনও, চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে জাতীয় সড়কের উপর থেকে বাইক ছিনতাই কিংবা ফাঁকা ঘর থেকে সোনাদানা, মোবাইল, ল্যাপটপ প্রভৃতি ছিনতাই। শুধু রাতের বেলায় নয়, ভরদুপুরে কিংবা কাকভোর-বিকেল-সন্ধ্যাতেও হয়েছে চুরি-ছিনতাই। মাঝেমধ্যে কিছু দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরলেও, পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি এই চুরি-ছিনতাই। অবশেষে, ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, ‘গ্রাম সুরক্ষা বাহিনী’ গড়ে তোলার। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত এবং খড়্গপুর গ্রামীণ থানাও।

thebengalpost.net
রাত পাহারায় এলাকাবাসী :

লছমাপুর তিন নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নান্টু দোলই মঙ্গলবার জানান, “গোটা নভেম্বর মাস জুড়ে জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এই গ্রামগুলিতে বেনজির চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তা রুখে দিতে এই অঞ্চলের প্রায় দশটি গ্রামের ২৪০ জন যুবককে নিয়ে আমরা গড়ে তুলেছি রাধানগর গ্রাম সুরক্ষা বাহিনী। ২৪ টি দলে তা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন রাত্রি সাড়ে দশটা থেকে ভোর চারটা অবধি দেওয়া হচ্ছে রাতপাহারা। এর ফলে শুধু এই অঞ্চলেই নয়, গত ১২-১৫ দিন ধরে আশেপাশের কোন গ্রামেই আর চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি।” গ্রামের এক যুবক অভিজিৎ ঘড়া এই পাহারাদার দলের অন্যতম সদস্য। তিনি সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত পাহারা দিতে দিতেই জানালেন, “খড়্গপুর গ্রামীণ থানার ওসি স্বয়ং আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। লাঠি, টর্চ, বাঁশি প্রভৃতি সরঞ্জাম তুলে দিয়েছেন।” শুধু তাই নয়, পুলিশ সূত্রেও জানা গেছে, খড়্গপুর গ্রামীণের যে পুলিশ কর্মীরা ৬০ নং জাতীয় সড়কে পেট্রোলিং এর দায়িত্বে থাকেন, তাঁরাও ওই রাত পাহারাদার দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। মাঝেমধ্যেই গাড়ি নিয়ে ওই এলাকা ঘুরে যান। সম্মিলিত এই প্রচেষ্টায় বন্ধ হয়েছে চুরি-ছিনতাই। স্থানীয় রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা ইন্দ্রনীল নাথের বাড়িতে মাত্র ২০ দিন আগেই চুরি হয়েছিল। তিনি বললেন, “আমার ছেলের মোবাইল, ল্যাপটপ, মানি পার্স সব চুরি করে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এরপর, গ্রামবাসীরা মিলে যে সুরক্ষা বাহিনী তৈরি করা হয়েছে রাতপাহারার জন্য, তাতে আমি বা আমার ছেলে থাকি পালা করে। এর ফলে সত্যিই বন্ধ হয়েছে চুরি-ছিনতাই।” পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, সাধারণ মানুষ বিকেলবেলা কিংবা ভোরবেলাতেও বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পেতেন। সবজি ব্যবসায়ীরা ভোর বেলা সবজি নিয়ে বের হতেন না! বাড়ির মেয়েরা বিকেলের পর বাড়ি থেকে বের হতেন না। সাগরিকা দোলই নামে এক মহিলা জানালেন, “বাড়ি থেকে বেরোলেই গা ছমছম করত। এখন সাহস করে বাড়ি থেকে বেরোই”। রাত্রি সাড়ে দশটা থেকে ভোর চারটা অবধি অপরিচিত কাউকে এলাকায় দেখলেই, এখন বাঁশি বেজে ওঠে। ঘিরে ফেলা হয় ওই ব্যক্তিকে। চলে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ। নিশ্চিত হলেই ছাড়া হয়। সুমিত চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি রবিবার রাতে আত্মীয় বাড়ি থেকে রাধানগরের ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, কড়া জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়। তবে তিনি খুশি গ্রামবাসীদের এই উদ্যোগে! বললেন, “খুব দরকার ছিল এটা। আগে এই রাস্তা দিয়ে গেলে, আতঙ্কে থাকতাম। ওনারা আমাকে সব জিজ্ঞাসা করে ছেড়ে দিলেন। শুনেছি গত ১২-১৪ দিন ধরে এই এলাকায় চুরি-ছিনতাই হয়নি। মানুষ শান্তিতে ঘুমোচ্ছেন।” আর, এভাবেই শুধু পুলিশ প্রশাসনের উপর ভরসা না করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন খড়্গপুর গ্রামীণের এই বাসিন্দারা। আর, রাধানগর বা লছমাপুর গ্রাম যেভাবে নিজেদের আত্মরক্ষার তাগিদে ঐক্যবদ্ধ হলেন, তা সত্যিই অন্য অনেক গ্রাম কিংবা এলাকার কাছে এই সময়েও শিক্ষণীয় হয়ে থাকল! মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

thebengalpost.net
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গড়ে উঠেছে পুরো টিম :

Special Story: Silent night, villagers united in village protection! The miscreants retreated to Paschim Medinipur The Bengal Post Special Report, Maniraj Ghosh, 14 December:
Silent winter night! Intense light of LED torch is coming out from time to time through the darkness. Sometimes the sharp sound of a whistle. The knocking sound of bamboo sticks on the paved road. Villagers united in night watch. Not twelve or thirteen years ago (2008-’09) that Maoist time! December 2021. However, the scene reminds the people of West Midnapore of those horrible Maoist memories of the days when the people of West Midnapore were forced to guard the night. Again, the memory of many is coming to the fore exactly fifteen years ago in the Inda area of ​​Khargpur city to stop the terror Rajesh Gupta, the police and the locals to keep a joint night guard. This time the venue is Khargpur rural area adjacent to National Road No. 60 next to Khargpur town. Right next to the national highway, Khargpur Grameen’s Lachhmapur area number three Khatranga, from Radhanagar to Balihati, Jakpur about 12-14 villages in the last 2-3 months of continuous theft, snatching, robbery. Sometimes in a fancy way, bikes are snatched from the national highway by sprinkling lentil powder in the eyes or gold, mobiles, laptops etc. are snatched from the empty house. Thefts and robberies have taken place not only at night but also in Bharadupura or Kakvor-Bikel-Sandhya. Although the police caught some miscreants from time to time, the theft could not be stopped completely. Finally, from the beginning of December, the locals unanimously decided to form a ‘village security force’. The local Gram Panchayat and Khargpur Grameen Thana also extended a helping hand.
Nantu Dolai, head of Lachhmapur Gram Panchayat No. 3, said on Tuesday, “Throughout the month of November, Benazir’s thefts have taken place in these villages along the national highway. It has been distributed. Every night from 10.30 pm to 4 am, night watch is being given. As a result, not only in this area, but also in the last 12-15 days, there has been no incident of burglary in any nearby village. ” Abhijit Ghara, a young man from the village, is one of the members of the guard. He said as he was on guard on Monday night (December 13), “The OC of Khargpur Gramin Thana himself has extended a helping hand to us. He has also handed over sticks, torches and flutes.” Not only that, the police sources also said that the police personnel of Khargpur Grameen who are in charge of patrolling on National Road No. 60, also kept in touch with the guards that night. Occasionally drive around the area. The joint effort has stopped theft. The house of Indranil Nath, a resident of local Radhanagar village, was burglarized only 20 days ago. He said, “My son’s mobile phone, laptop, money purse were all stolen by the miscreants. After that, the security forces formed by the villagers for night watch, I or my son stayed there. As a result, the looting really stopped.” The situation was such that ordinary people were afraid to leave their homes in the afternoon or early morning. Vegetable traders would not go out in the morning with vegetables! The girls of the house would not leave the house in the afternoon. A woman named Sagarika Dolai said, “I used to get scared when I left the house. Now I dare to leave the house.” Whenever you see a stranger in the area from 10:30 pm to 4:00 am, now the flute sounds. The man was surrounded. Strict interrogation left. Except when confirmed. A man named Sumit Chowdhury was returning home from his relative’s house in Radhanagar on Sunday night when he was subjected to severe interrogation. However, he is happy with the initiative of the villagers! He said, “It was very necessary. I used to be terrified when I passed this road. They left me after asking everything. I have heard that there has been no robbery in this area for the last 12-14 days. People are sleeping in peace.” And, in this way, these residents of Khargpur Grameen have become united without relying only on the police administration. And, the way Radhanagar or Lachhmapur village united in self-defense, it really did teach many other villages or areas even at this time! Conscious citizens think.