thebengalpost.net
বাড়িতে প্রশাসনের আধিকারিকরা (শুক্রবারের ছবি) :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ ডিসেম্বর: প্রায় বিশ বছর পর শেকল-মুক্ত হলেন মেদিনীপুরের শাহজাহান! বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে, মানসিক ভারসাম্যহীন শাহজাহান-কে বাধ্য হয়ে ‘শেকলবন্দী’ করে রাখার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তার জেরেই শুক্রবার প্রশাসনের আধিকারিকরা গিয়ে শাহজাহানের অসহায় পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং তার পায়ের শেকল খুলে দেন। সর্বোপরি, মানসিক ভারসাম্যহীন ২২ বছরের যুবকের চিকিৎসার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এবং আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ‘মানবিক ভাতা’র ব্যবস্থা করে দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়। আর, জেলা শহর মেদিনীপুরের উপকন্ঠে (গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত), সদর ব্লকের কালগাং মালিয়াড়া এলাকার এই ঘটনার নেপথ্যে যাঁরা অবদান রেখে গেলেন, তাঁরা সেই ‘দু পয়সার সাংবাদিক’ (কোনও এক সাংসদের দেওয়া সাম্প্রতিক উপাধি)!

thebengalpost.net
শেকল বন্দী শাহজাহান : (বৃহস্পতিবারের ছবি)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পেশায় রিকশাচালক বাবুয়া মোল্লা ও মর্জিনা বিবির তিন সন্তান, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে বড় (২২)। একসময় বাবা রিক্সা চালিয়ে কোনক্রমে চালাতেন। বর্তমানে, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন! কারণ, এখন আর রিক্সায় বিশেষ কেউ চড়েন না। অপরদিকে, ছোটবেলায় (এক-দু’বছর বয়সে) একটি দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে আঘাত লাগার পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তাঁদের ছেলে শাহজাহান। বড় হওয়ার পর থেকে শাহজাহানকে সামলানো তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায়! মানসিক ভারসাম্যহীন শাহজাহান যেখানে সেখানে দৌড়ে পালিয়ে যায়! তাই, দুর্ঘটনার আতঙ্কে, শাহজাহানকে বেশিরভাগ সময়ই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন অসহায় বাবা-মা। গত প্রায় ২০ বছর ধরে এমনভাবেই চলছিল! অন্যদিকে, প্রশাসনের তরফে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি ‘মানবিক ভাতা’ কিংবা সুচিকিৎসা, কিছুই মেলেনি! অবশেষে, সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুক্রবার সকালেই পৌঁছে যান প্রশাসনের আধিকারিকরা।

thebengalpost.net
বাড়িতে প্রশাসনের আধিকারিকরা (শুক্রবারের ছবি) :

শুক্রবার, মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত কালগাং মালিয়াড়া অঞ্চলের শেকলে বাঁধা বছর ২২ এর প্রতিবন্ধী যুবক শাহজাহান মোল্লার পায়ের বেড়ি খোলা হলো ব্লক প্রশাসনের তরফে। মেদিনীপুর সদর বিডিও অফিসের সোস্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসার চন্দন রজক সহ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরা আজ প্রতিবন্ধী যুবকের বাড়িতে গিয়ে পায়ের শিকল খুলে ফেলেন! চন্দন বাবু জানান, “আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ওই যুবকের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।” এছাড়াও ওই যুবকের চিকিৎসা সহ অন্যান্য সরকারী সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা।