দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, তনুপ ঘোষ, ১৩ ডিসেম্বর: “কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি, বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি”! অন্যান্য বছর এই সময় কুমোরপাড়ার বাসিন্দাদের নাওয়া-খাওয়া ভুলে যেতে হত। একদিকে, মাটির জিনিস তৈরি করা, অন্যদিকে বাড়িতেই মাটির জিনিসের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা, আবার তা সাজিয়ে বিভিন্ন হাটে বা মেলায় নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা! ‘বছরের এই ক’টা দিন’ সে এক মহা ব্যস্ততা। গত বছরও প্রথম ঢেউয়ের অন্তিম লগ্নে আর দ্বিতীয় ঢেউ আসার অন্তত ৩-৪ মাস আগেই পৌষ সংক্রান্তি পড়ায়, বাজার মোটামুটি চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। তবে, এবার ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তে করুণ দশা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বাচকা গ্রামের কুমোরপাড়ার বাসিন্দাদের। একদিকে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক পৌষ সংক্রান্তির মেলা, অন্যদিকে বাড়িতেও আর খদ্দেরদের দেখা নেই! ফলে, কুমোর পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির সামনে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রয়েছে হাতি-ঘোড়া কিংবা একাধিক মাটির সামগ্রী। দেখা নেই ক্রেতাদের! এতেই মন ভার চন্দ্রকোনার বাচকা গ্রামের কুমোরপাড়ার বাসিন্দাদের।
জানা যায়, বাচকা গ্রামের প্রায় ২৫টি পরিবার চাষবাসের সাথে মাটির জিনিস তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। মূলত পৌষ সংক্রান্তির সময় পশ্চিম মেদিনীপুর সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় যে ‘বন দেবী’ (বা, বন দেবতার)-র পূজো হয়, বা তাকে ঘিরে যে মেলা বসে, সেই মেলাতেই এই মাটির জিনিস বিক্রি হত। একে ঘিরে সাধারণ মানুষের চাহিদা থাকতো তুঙ্গে। কিন্তু, এই বৎসর করোনার জেরে অধিকাংশ ‘বন দেবতা’র পূজো হবে না বলে জানানো হয়েছে। মকর সংক্রান্তির মেলা সহ কোনো মেলাই বসবেনা এবং বাইরে থেকে লোকজনও আসবেনা বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। সেজন্যই, মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়ার বিক্রি নেই। বহুটাকার সরঞ্জামের পসরা সাজিয়ে বসলেও, দেখা নেই পাইকারি ক্রেতাদের। তাই, চরম বিপাকে কুমোর পাড়ার বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, এই বছর এমনিতেই পরপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে, চাষবাসে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন; ভেবেছিলেন হয়তো মাটির জিনিস তৈরি করে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবেন! কিন্তু, বাধ সাধল করোনার তৃতীয় ঢেউ। মাটির জিনিসপত্র প্রায় এক বছর ধরে তৈরি করে রাখার পরেও, বিক্রি না হওয়ায় হতাশ তাঁরা! তাঁদের দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে দেখুন।