দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ অক্টোবর: সাম্প্রতিক “কৃষক আন্দোলন” কে সমর্থন করতে গিয়ে দমদম পার্ক (Dumdum Park) এর ভারতচক্র পূজা কমিটি (Bharat Chakra Puja Committee) তাদের পুজোর থিমে ‘জুতো’র ব্যবহার করেছে মণ্ডপের বাইরের সজ্জায়! এ নিয়ে, দমদম পার্ক ভারত চক্র পুজো কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ইতিমধ্যে। লেকটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা দেবী-কে অপমান করেছেন, আঘাত দিয়েছেন হিন্দু ভাবাবেগে! আর, রবিবার এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “শৈল্পিক স্বাধীনতা’র নামে মা দুর্গাকে অপমান করার এই জঘন্য কাজ সহ্য করা হবে না!” তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব-কেও এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। সোমবার বিকেলে এ নিয়ে সরব হলেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ-ও। তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, “দুর্গাপুজো-কে রাজনৈতিক বানানো, কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়! বাঙালির সর্বশেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার পবিত্রতা ও গরিমাকে নষ্ট করা হয়েছে জুতোর ব্যবহার করে।” যদিও, পুজো কমিটির সাফাই ছিল, “দমদম পার্ক সব সময় সাম্প্রতিক ঘটনা বা সমস্যাকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। অতীতের বিভিন্ন ঘটনা ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা থেকে এবার আমরা এই থিমটিকে বেছে নিয়েছি। চটি হচ্ছে একটা প্রতীকী বিষয়! মূল মণ্ডপে যেখানে মা বসে রয়েছেন তার সঙ্গে চটির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরাও ২১ বছর ধরে যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করছি। এখানে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” তবে, এ নিয়ে ইতিমধ্যে পুজো কমিটির কাছে আইনি নোটিশ পৌঁছে গিয়েছে।

thebengalpost.net
ভারত চক্রের মণ্ডপ সজ্জা :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগে কয়েকজন অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সোমবার তাঁরা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুজো কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। অমর দত্ত নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “আজ, আমরা লেকটাউন থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। পুজো একটা সামাজিক অনুষ্ঠান। এটা হিন্দুদের সবথেকে বড় উৎসব। সবার এর মধ্যে যোগ দেওয়া উচিত। তাঁরা হিন্দুদের আবেগে ধাক্কা দিয়েছে।” কিন্তু, কী আছে মণ্ডপ সজ্জায়? উদ্যোক্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের ছবি। তেভাগা (Tebhaga) আন্দোলন থেকে নীল বিদ্রোহ, বারাসত বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ সহ দেশে বিভিন্ন সময়ে হওয়া কৃষক আন্দোলনের ছবিও তুলে ধরা হয়েছে। ফলে, মণ্ডপের প্রতিটি কোণায় কোণায় সারি সারি চটি বা জুতো কৃষকদের “কঠিন যাত্রা”র ‘প্রতীক’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্যান্ডেলের চারদিকে ছড়ানো রয়েছে ‘জীর্ণ ছেঁড়া চটি’। ভিতরের দেওয়ালে আছে বিরাট পদচিহ্নের মাঝে অসংখ্য মুখ। এই মণ্ডপসজ্জাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। একশ্রেণীর হিন্দুদের মন্তব্য, শ্রদ্ধার সঙ্গে দুর্গোৎসব হয়। কিন্তু, জুতো ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিকে নষ্ট করা হচ্ছে। হিন্দু ধর্মের অপমান করা হচ্ছে। এ ভাবে ধর্ম রক্ষা করা যায় না! অপরদিকে, পুজো কমিটির পাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী ও পৌর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমি যদি মুচি হই আমি যেটা সৃষ্টি করি অর্থাৎ সেটা দিয়ে মাকে আহ্বান করবো। ছুতোর হলে লোহার টুকরো দিয়ে মাকে আহ্বান করব। আমি মণ্ডপ সাজাবো কিসে সেটা নিয়ে বিজেপি ফতোয়া করবে তা মানা যায় না! কাউকে অপমান করার জন্য ভারতচক্র এই মণ্ডপ তৈরি করেননি। দেশের বর্তমান অবস্থাটা বোঝাবার জন্য এই মণ্ডপ তৈরি করেছে। সেখানে সিম্বলের কাজ করেছে জুতো।”

thebengalpost.net
মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষ :