Special Article

Midnpaore: লতা মঙ্গেশকর নাইট! মেদিনীপুর কলেজ মাঠ মাতিয়ে দিয়েছিলেন সুর সম্রাজ্ঞী, সঙ্গে ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মণিরাজ ঘোষ, ৬ ফেব্রুয়ারি: আশির দশক। বয়স তখন তাঁর ৫৭। কেরিয়ারের একেবারে মধ্যগগনে। সেই সময়ই অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলা সদর মেদিনীপুরে পা রেখেছিলেন ‘সুর সম্রাজ্ঞী’ লতা মঙ্গেশকর। ১৯৮৬’র ২ মার্চ ঐতিহ্যমণ্ডিত কলেজ কলেজিয়েট মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল- ‘লতা মঙ্গেশকর নাইট’। সারা রাত অনুষ্ঠান হয়েছিল। রাত্রি ১০ টা থেকে সকাল প্রায় ৬ টা। লতা মঙ্গেশকর ছাড়াও ছিলেন, তাঁর বোন ঊষা মঙ্গেশকর, সুরেশ ভটকড়, শৈলেন্দ্র সিং, সাব্বির কুমার প্রমুখ। ছিলেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং হৈমন্তী শুক্লাও। তৎকালীন দিনের প্রায় ৮ লক্ষ টাকা বাজেটের অনুষ্ঠান। লতা মঙ্গেশকর সহ মুম্বাইয়ের শিল্পীরাই নিয়েছিলেন সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা। বাকি কলকাতার শিল্পীরা। আর, এই অসাধ্য সাধন যিনি করে দেখিয়েছিলেন তিনি মেদিনীপুর শহরেরই (পাটনা বাজারের) বাসিন্দা বাবলু চক্রবর্তী। অনুষ্ঠান আয়োজনই ছিল তখন তাঁর পেশা ও নেশা। প্রায় ২ বছরের চেষ্টায় সুরের সরস্বতী-কে মেদিনীপুরের বুকে আনতে পেরেছিলেন তিনি। যে দু’টি ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান হয়েছিল- মেদিনীপুর শহরের সেন্টাফোকিয়া এথেলেটিক ক্লাব এবং দেবছায়া নবারুণ ক্লাব। টিকিট কেটে অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রায় ২০ হাজার দর্শক। দুই ধরনের টিকিটের ব্যবস্থা ছিল। চেয়ার এবং মাটিতে। চেয়ারের জন্য ১০০ টাকা (২০০, ৩০০ ও ৫০০-রও ছিল) এবং মাটিতে ৫০ টাকা (৩০, ৭০, ১০০-রও ছিল)। কানায় কানায় ভর্তি হয়েছিল মাঠ। অনুষ্ঠান সফলও হয়েছিল। বর্তমানে, থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ করা অশীতিপর বাবলু চক্রবর্তী জানালেন, “অনুষ্ঠান এতটাই সফল হয়েছিল। উনি মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন, মেদিনীপুর যদি আবার ডাকে, তাহলেও তিনি আসবেন।” তবে, অবিভক্ত মেদিনীপুরে সেটাই ছিল তাঁর প্রথম ও শেষ আসা। আজ (৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার) লতা বিদায়ের দিনে সেই স্মরণীয় দিনের স্মৃতিচারণাতেই মেদিনীপুরাসী।

মেদিনীপুরে লতা :

ঘড়িতে তখন রাত্রি ঠিক ১০টা। দেবী সরস্বতী-কে প্রণাম করে মঞ্চে উঠলেন ‘জীবন্ত সরস্বতী’ লতা মঙ্গেশকর। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে তাঁর কোকিল কন্ঠে গেয়ে উঠলেন “একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি।” হাততালিতে ফেটে পড়ল ক্ষুদিরামের মেদিনীপুর। মেদিনীপুরের ‘অগ্নিসন্তান’ শহীদ ক্ষুদিরামের মটিতে দাঁড়িয়ে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের কন্ঠে সেই গান শুনে সেদিন অনেকেরই শরীরের রোম খাড়া গিয়েছিল! স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জানালেন মেদিনীপুরের বহু প্রবীণ নাগরিক। নবারুণ ক্লাবের তৎকালীন সদস্য সুব্রত চক্রবর্তী স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, “কলেজ মাঠে তৈরি হয় মঞ্চ। মঞ্চ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় কলকাতার বিখ্যাত মডার্ন ডেকরেটার্সকে। দর্শকদের জন্য ১০ হাজার চেয়ার পাতা হয়। বাকি ১০ হাজার দর্শকের জন্য মাটিতে আসন করা হয়। মূল অনুষ্ঠানের তিনদিন আগে থেকেই শহরের দখল নেয় পুলিশ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলে হয় গোটা শহর। ওইদিন শহরে যদি কোনও ছিঁচকে চোরও আসত, তাহলে সে আর শহরের বাইরে বেরোতে পারত না! অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছিল ‘লতা মঙ্গেশকর নাইট’। সেদিন লতা জী ছাড়াও ঊষা মঙ্গেশকর, সুরেশ ভাটকাড়, শৈলেন্দ্র সিং, সাব্বির কুমার, হৈমন্তী শুক্লা, হেমন্ত মুখপাধ্যায়ের মতো খ্যাতনাম সঙ্গীত শিল্পীরাও একই মঞ্চে গান গেয়েছিলেন। মুম্বাই থেকে মিউজিসিয়ান, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়াররা সব এসেছিলেন।”

Lata Mangeshkar in Midnapore :

আর, যাঁর হাত ধরে মেদিনীপুর শহরের ওই দুটি ক্লাব মেদিনীপুরবাসীকে ধন্য করেছিল, সেই বাবলু চক্রবর্তী বললেন, “প্রায় ২ বছর আগেই তাঁর আসার কথা ছিল মেদিনীপুরে। আসতে পারেন নি কোনো কারণে। আমাকে ডেকে পাঠিয়ে, সযত্নে হলুদ কাপড়ে মুড়ে রাখা অগ্রিম ৭৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছিলেন! জানিয়েছিলেন, অনুষ্ঠান শেষ না হলে, আমি ওতে হাত দিইনা! মুগ্ধ হয়েছিলাম। পুনরায় ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে গিয়ে ৮৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে এসেছিলাম। এজন্য, কলকাতা ও মুম্বাইয়ের অনেক শিল্পীই সাহায্য করেছিলেন। সেবার (২ মার্চ, ১৯৮৬) সার্কিট হাউসে ছিলেন লতা জী। পরদিন সকালেই তাঁর মার্সিডিজ গাড়িতে করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। ‘খালি পায়ে’ মঞ্চে উঠে প্রথমেই সরস্বতী স্তোত্র পাঠ করেছিলেন তিনি। তারপর একে একে ‘একবার বিদায় দে মা’, ‘এ মেরি বতন কি লোগো’, ‘রাম তেরি গঙ্গা মাইলি’, ‘তুঝে বুলায়ে’-এর মতো হিট গান গেয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। ‘এ মেরি বতন কি লোগো শুনে’ চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি মেদিনীপুরবাসী!” সেদিনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মেদিনীপুরের অভিজ্ঞ সাংবাদিক দেবনাথ মাইতি বললেন, “আমি তখন সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি। যাত্রা, নাটক, গান (সেই সময় নাইট মানে সারারাত ) মেদিনীপুর শহরে প্রায় হতো। আমাদের বিচ্ছু বন্ধুদের একটা দল ছিল। আমরা কেউ টিকিট কাটতাম না। ত্রিপলকে তুলে, ঢুকে গিয়ে একদম মঞ্চের সামনে বা আরো সুযোগ পেলে গ্রীন রুমেও চলে যেতাম। ওইদিন রাত ৯ টা নাগাদ খেয়েদেয়ে আমরা কলেজ মাঠের কাছে পৌঁছে গেলাম। রাত ১০ টা নাগাদ সুযোগ বুঝে পুলিশের নজর এড়িয়ে ত্রিপল গলে ঢুকে গেলাম। মঞ্চের সামনে থেকে লতাজীকে দেখা আর তাঁর গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। বুঝতে পারিনি সেটাই অখন্ড মেদিনীপুরে তাঁর প্রথম ও শেষ আগমন হবে!”

মেদিনীপুরে সকলের সঙ্গে সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর :

News Desk

Recent Posts

Snake Lover: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন; পোষা কেউটের দংশনেই প্রাণ হারালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘সর্পবন্ধু’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…

1 day ago

Medinipur: খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাফিলতিতে মাতৃগর্ভেই শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…

1 day ago

Midnapore: কথা দিয়ে কথা রাখেনি; পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষকের করা মামলায় বহুজাতিক সংস্থাকে জরিমানা করল জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…

3 days ago

Medinipur: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ি; হঠাৎই বেরিয়ে এল প্রাচীন সুড়ঙ্গ! চাঞ্চল্য পশ্চিম মেদিনীপুরে

শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…

3 days ago

Midnapore: সিরিঞ্জ থেকে জীবনদায়ী ওষুধের সং*কট মেদিনীপুর মেডিক্যালে! চিঠি লিখলেন জুনিয়র ডাক্তাররা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…

4 days ago

Midnapore: ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কারে ভূষিত হলেন বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…

4 days ago