দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম, ৯ ফেব্রুয়ারি: গ্রামে মোবাইলের নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যা হয়।‌ এদিকে, ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট ছাড়া এগোনো যায় না। সেই ভাবনা থেকেই প্রকৃতি প্রেমিক বরুণ বানিয়ে ফেললেন তাঁর স্বপ্নের ‘গাছ বাড়ি’! এখন সেই গাছ বাড়ি-তে বসেই চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বরুণ। শুধু তাই নয়, গ্রামের অন্যান্য কিশোর-যুবকরাও নেটওয়ার্কের সমস্যায় পড়লে অনায়াসে উঠে যান বরুণের গাছ বাড়ি-তে। অনেকেই পড়াশোনাও করেন। ছুটির দিনে চলে গেম খেলা, সিনেমা দেখা! জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার শিলদা এলাকার জয়পুর গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ এখন বরুণের এই গাছ বাড়ি।

thebengalpost.net
বরুণের গাছ বাড়ি:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জয়পুর হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর শিলদা কলেজ থেকে বিএসসি (B. Sc) পাশ করে সম্প্রতি বি.এড (B.Ed) করেছেন বরুণ। এই মুহূর্তে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার সঙ্গে টিউশন পড়ান। ছোট বেলাতেই পথ দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা বাণীকুমার দাস। এক দাদা তরুণ দাস থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। সংসারের হাল ধরেছেন মা তুলসী দাস। গ্রামের রাস্তার পাশে তেলেভাজা দোকান চালান। বরুণ ছোটো থেকেই গাছ পালার মধ্যেই বড় হয়ে উঠেছে। গাছকে ভালোবেসে তাই সেই গাছেই নিজের স্টাডি রুম বানিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু, হঠাৎ কেন এমন ভাবনা? বরুণ জানান, জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকা। অথচ ডিজিটাল যুগে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ছাড়া সবকিছুই অচল। সেখান থেকেই ২০১৯ সালে এই ভাবনা কার্যকরী করেন তিনি।

কিভাবে বানালেন এই গাছ বাড়ি? বরুণ বলেন, নিম গাছ এমনিতেই শক্ত পোক্ত গাছ। তিনটি মোটা গাছের ডালের উপর বাঁশ, কাঠ পরপর বেঁধে তার উপর খড়, চাটাই, ত্রিপল পাতা হয়েছে। বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে। ছোট দরজা আছে। চাবি-তালা দেওয়া যায়। অন্যদিকে খোলা জানালা আছে। হাওয়া আসার জন্য। বৃষ্টি আসলে ত্রিপল ফেলে দিতে হয়। রয়েছে আলোর ব্যবস্থাও। বরুণ জানান, অতিমারীর সময়ে অর্থাৎ ২০২০ ও ২০২১ সালে তাঁর এই স্টাডি রুম দারুন কাজে লেগেছে। গ্রামের আরো অনেক স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া তাঁর এই স্টাডি রুমে এসে পড়াশুনা করত। এখনো তারা আসে। মোবাইলে নেটওয়ার্ক না থাকলে উঠে পড়ে গাছ বাড়িতে। শুধু গ্রামবাসীদেরই নয়, বরুণের এই গাছ বাড়ি মন কেড়েছে সবার।

thebengalpost.net
চলছে পড়াশোনা: