দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ৩০ জুলাই: লৌকিক বাংলায় “পিরিতে মজিলে মন কিবা হাড়ি কিবা ডোম!” ‘প্রেম’ মানে না জাত, কুল, ধর্ম, বর্ণ, বয়স। রবি ঠাকুরের ভাবনায় , “প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথা ধরা পড়ে, কে জানে!” তাই, ৬৫ (বর্তমানে ৭০, জন্ম ১৯৫২ সালে)-এর পার্থ’র সঙ্গে ৩৫ এর অর্পিতা’র অসম-সম্পর্ক গড়ে উঠতেও বেশি দেরি হয়নি! তবে, শুধুই ‘প্রেম’ নাকি এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল বিত্ত, বৈভব, লোভ, লালসা- এসবের উত্তর খোঁজার জন্য মনোবিদের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, নিজেদের বুদ্ধি খরচ করেই উপলব্ধি করতে পারছেন সচেতন নাগরিকরা। সে যাই হোক, ইডি’র কাছে জেরায় পার্থ-প্রিয়া অর্পিতা স্বীকার করেছেন, “ভাল বন্ধু ছিলেন পার্থ। ২০১৭ সালে স্ত্রী (বাবলি চট্টোপাধ্যায়)’র মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন উনি (পার্থ চট্টোপাধ্যায়)। মেয়ে-জামাইও বিদেশে থাকতেন। সেই সময় থেকেই আমার সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়ে! বেশিরভাগ সময়-ই আমার ফ্ল্যাটে আসতেন।” সময়টা ২০১৭, বছর ৬৫’র পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখন রাজ্যের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী (শিক্ষামন্ত্রী), শাসকদলের মহাসচিব, শৃংখলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান- প্রভৃতি আরও কত কি! আর, সেই ক্ষমতাবলে চিরকালের ‘অহংকারী’ আর ‘অর্থলোভী’ পার্থ নিজের শিক্ষামন্ত্রীত্বের সুযোগ নিয়ে এজেন্টদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে। স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভালো, ২০১৪-‘১৫ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া তখন সবে শুরু হচ্ছে। এসবের সঙ্গে গ্রুপ- সি, ডি এবং কলেজ সার্ভিস কমিশন-তো ছিলোই। সবমিলিয়ে, চাকরি বিক্রির এক বড়সড় ব্যবসা খুলে বসেছিলেন পার্থ। আমদানি-রপ্তানি ভালোই হচ্ছিলো। সেই সময়ই জীবনে এসেছেন বছর ৩৫- এর এই সুন্দরী-রমনী। একেবারে সোনায় সোহাগা!
হ্যাঁ, সোনা-হিরে-জহরতে অর্পিতাকে মুড়িয়ে দিতে ভুল করেননি পার্থ। সঙ্গে একের পর এক অভিজাত আবাসন, বিলাসবহুল গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণের স্বর্গীয় সুখ- প্রভৃতি তো ছিলোই। ক্রমেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে দু’জনের! হাজার হাজার বঞ্চিতদের ‘চোখের জল’ সেদিন উপলব্ধি করার ক্ষমতা ছিলো না পার্থ’র। কারণ, শুধু তো অর্পিতা নয়, ক্ষমতার আকর্ষণে, আখের গুছিয়ে নিতে পার্থর চারপাশে এসে জুটেছেন মোনালিসা-অহনা-মানসীরা। সবমিলিয়ে, পার্থ’র তখন দেবরাজ ইন্দ্রের মতো জীবন! অপ্সরা বেষ্টিত স্বর্গীয় সুখ-সৌন্দর্য! তবে, সবার থেকে বেশি বিশ্বাস করতেন অর্পিতা’কেই। অর্পিতাও অবশ্য বিশ্বাসের মূল্য রেখেছেন! একদিকে যেমন পার্থর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কোনও দিন মাথা ঘামাননি, ঠিক তেমনই পার্থ যা বলেছেন তাই করেছেন। এমনকি, সম্পর্কের পবিত্রতা বজায় রাখতে শারীরিক ‘অতৃপ্তি’ও মিটিয়ে নিয়েছেন কৃত্রিম যন্ত্র কিনে! তার প্রমাণ-ও ইডি আধিকারিকরা ‘খুঁজে’ পেয়েছেন। টাকাকড়ি, সোনাদানা, ‘পি’ লেখা সোনার আংটি ছাড়াও বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে দু-দুটি সেক্স টয়! আর, সম্পর্ক যে কতখানি ‘গভীর’ ছিল, নিজেদের হেফাজতে নিয়েও টের পাচ্ছেন আধিকারিকরা। টাইপ-টু সুগারের (ডায়াবেটিসের) রোগী পার্থ’র জন্য এইমসের নির্দেশ মতো ডায়েট চার্ট তৈরি হয়েছে। তবে, পছন্দ মতো খাবার না পেয়ে অখুশি পার্থ! ভাত খেতে চেয়েছেন। ভাত না দেওয়ায়, গোঁসা করে বসে থেকেছেন! এই অবস্থায় আসরে নামতে হয়েছে অর্পিতা-কে। প্রিয় বান্ধবীর ধমকে রুটি আর ফ্লুইড খেয়েই ‘চুপ’ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী! হ্যাঁ, এমনই এক প্রেমকাহিনী অপা’র। নিয়োগ দুর্নীতি আর ১০০ কোটির সম্পত্তি ভেদ করেও অপা’র ‘অপার প্রেম’ রহস্য উদঘাটন-ও ধীরে ধীরে করছেন ইডি আধিকারিকরা!