দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, সমীরণ ঘোষ, ১৬ জানুয়ারি: হ্যাঁ, এ নিয়ে আর সন্দেহের অবকাশ থাকলো না অভিষেকের কথাই শেষ কথা। আর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-ই আগামী’র নেতা। তা সে যতোই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কেউ কেউ বলুন না কেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কাউকে নেতা মানিনা!” প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি চাইছি নির্বাচন ২ মাস পিছিয়ে যাক।” তারপরই, এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। কারণ তার আগে অবধি, নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তৃণমূলের কেউ ‘টুঁ’ শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। বরং, তৃণমূল নির্বাচন চেয়েছিল বলেই, রাজ্য নির্বাচন কমিশন আদালতে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছিল। এরপর, ৮ জানুয়ারি (শনিবার) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পর তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, “অভিষেকের মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকেই বিপদে ফেলছে। একজন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত মতামত বলে কিছু হয়না!” কটাক্ষ করেছিলেন, করোনা পরীক্ষা সংক্রান্ত অভিষেকের ‘ডায়মন্ডহারবার মডেল’ কেও। সাংসদ কল্যাণের বক্তব্য ছিল, “কিসের ডায়মন্ডহারবার মডেল। মনে নেই ১ জানুয়ারি বর্ষবরণের রাতে, মুম্বাই থেকে গায়ক এনে, কয়েকহাজার সমাগম করে এমপি কাপের ফাইনাল করা হয়েছিল! আর আমাকেও যদি কিট দেওয়া হয়, আমিও করোনা পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিতে পারি।” যোগ করেছিলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কাউকে নেতা বলে মানিনা। তাঁর খারাপ সময়ের সঙ্গী আমি। দল ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতি করতে আসিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ-ই আমার পথ!” তবে, অনেকটা শুভেন্দু অধিকারীর ঢঙয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে শেষ পর্যন্ত ‘কল্যাণ’ যে নিজের ‘অকল্যাণ’-ই ডেকে আনলেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত! অভিষেক ভোট পিছানোর কথা বলতেই, সেই বক্তব্য তৃণমূলের দলীয় বক্তব্য হয়ে গেল। ‘গুডি গুডি বয়’ হয়ে, নির্বাচন কমিশনও তা মেনে নিয়ে শনিবার বিজ্ঞপ্তিও জারি করে দিল। ২২ জানুয়ারির পরিবর্তে, নির্বাচন হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। ২ মাস নয়, ভোট পিছোচ্ছে তিন সপ্তাহ! তবে, সংক্রমণ বাড়লে আগামী দিনে তা আরও পিছিয়ে যেতে পারে।

thebengalpost.net
অভিষেকের রেকর্ড :

thebengalpost.net
কল্যাণের হুঙ্কার :

আর, অভিষেক-কল্যাণ বিতর্কে কার্যত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়’কেই হুমকির সুরে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, “এই বিতর্কে অবিলম্বে ছেদ টানতে হবে। নাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। কারণ, অভিষেক’কে কটাক্ষ করার পরই দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়’কে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। তাঁর অপসারণ চান আরেক সাংসদ অপরুপা পোদ্দার। শুধু তাই নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই আকাশ বন্দোপাধ্যায় সমাজমাধ্যমে দাবি তোলেন, “শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়।” আর, সবশেষে ডায়মন্ডহারবারে অভিষেকের অনুগামীরা কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুত্তলিকা দাহ করে! এসব দেখেই বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং দাবি করেন, “আমি নিজে তৃণমূল দলটা করেছি। তাই জানি, অভিষেকের সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক আগে থেকেই সমস্যা ছিল। তবে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত পুরানোদের এখন আর কদর নেই!” ‘চুপ’ না করলে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়- কে যে দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়াও হতে পারে তাও আশঙ্কা করেছেন অর্জুন! সবমিলিয়ে, প্রথমে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে কল্যান এখন দলের কু-নজরে। তবে, রাজীবের বিরোধিতা করে ছাড় পেয়ে গেলেও, দলের আগামীর কান্ডারী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করায় কল্যাণের আগামীর পথ যে নিষ্কণ্টক হবে না, তা বলাই বাহুল্য!

thebengalpost.net
আকাশ ব্যানার্জি (Akash Banerjee)’র পোস্ট :

thebengalpost.net
কল্যাণ নয় অভিষেক-ই শেষ কথা :