মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ জুন: “এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু মুসলমান…..এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার!” পুণ্যতীর্থ ‘ভারতভূমি’ অনন্ত কাল ধরেই ধর্ম-বর্ণের মহামিলনস্থল। ১১২ বছর আগে ‘বিশ্বকবি’র কন্ঠেও ধ্বনিত হয়েছে (‘ভারততীর্থ’ কবিতায়, ১৯১০) সেই মিলনের সুর। তা সত্ত্বেও, মাঝে মাঝে দেশের ঐক্য আর সম্প্রীতির আবহ বিনষ্ট হয়। অবুঝ দেশবাসী বিস্মৃত হয় ভারতের আদর্শ, ঐতিহ্য কিংবা সংস্কৃতি। সম্প্রতি, টিভির পর্দায় কোনো একটি মন্তব্য-কে ঘিরে পরিস্থিতি ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে! ‘অপমানিত’ বোধ করে কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। আর, এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ! দুঃশ্চিন্তায় শিশু, মহিলা সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে, সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া ছাড়া, ভারতের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দেওয়া ছাড়া আর বোধহয় কোনো উপায় নেই। সেই দায়িত্ব-ই মাথায় তুলে নিল বিপ্লব, সংগ্রাম, প্রেম আর মানবতার শহর মেদিনীপুর। এগিয়ে এলো, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা ও শহর তৃণমূল কংগ্রেস। বিভিন্ন ধর্মের পুরোহিত বা যাজক বা ইমামদের নিয়ে পালন করা হল, মানবতার রাখী বন্ধন।
প্রসঙ্গত, অশান্ত এই সময়ে ধর্মীয় অপমানজনক মন্তব্য নিয়ে বিক্ষোভ-অবরোধ চলছে বাংলা জুড়েও। বিশেষত, হাওড়া, ধুলাগড় সহ বিভিন্ন এলাকায় একপ্রকার হিংসা’র আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গত কয়েকদিনে। মেদিনীপুর সহ রাজ্যের অন্যান্য এলাকায় অবশ্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে মন্তব্যকারী (নুপুর শর্মা)-কে গ্রেফতারের দাবিতে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সন্ধ্যায় এক অভিনব আয়োজনে সম্প্রীতি ও মিলনের বার্তা দিল মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। বিভিন্ন ধর্মীয় গুরুদের নিয়ে মানব বন্ধন ও ঐক্যের বার্তা দেওয়া হল ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশের ঐতিহ্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে। হিন্দুদের পুরোহিত ও মুসলমানদের ইমামরা উপস্থিত ছিলেন। একে অপরকে পরিয়ে দিলেন রাখী। হাতে হাত রেখে ঐক্যের শপথ নিলেন তাঁরা। জেলা তৃণমূল সভাপতি সুজয় হাজরার নেতৃত্বেই এই অভিনব আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন, শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব সহ অন্যান্যরাও। সুজয় বললেন, “আমদের ঘুম ভাঙে আজানে কিংবা গায়ত্রী মন্ত্রে। সন্ধ্যায় একসঙ্গে বসে আমরা কীর্তন শুনি কিংবা চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করি। এটাই আমাদের ভারতবর্ষ। এটা ভুলে যাওয়া কখনোই উচিত নয়।” সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের আয়োজন শান্তির বাতাবরণ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।