তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ ডিসেম্বর: শীতের রাতে কম্বল, শীতবস্ত্র আর কেক নিয়ে অসহায় মানুষদের কাছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের মহকুমাশাসক। সঙ্গে প্রশাসনের আধিকারিকরা। যেন স্যান্টাক্লজ নিয়ে এসেছেন শীত বস্ত্র সহ বড়দিনের উপহার কেক। প্রসঙ্গত, শীতে কাঁপছে পশ্চিম মেদিনীপুর সহ গোটা রাজ্য। তারই মাঝে অসহায় মানুষেরা কেউবা শুয়ে রয়েছেন ফুটপাতে, কেউবা রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে! শীতে ঠকঠক করে কাঁপছেন। আর সেই মানুষগুলোর হাতেই ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস তুলে দিলেন শীতের চাদর থেকে কম্বল, সাথে উপহার স্বরূপ বড়দিনের কেক। বড়দিনের কেক পেয়ে খুশি ঘাটালের অসহায় মানুষেরা। খুশি ফুটপাতবাসীরা, খুশি ঝুপড়িবাসিরা। বড়দিনের আগের রাতে (শুক্রবার রাত্রিতে) হঠাৎই ঘাটাল মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘাটালের এসডিও (মহকুমাশাসক) সুমন বিশ্বাস, ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী ও ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারীর প্রতিনিধি রামপদ মান্না গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ঘাটালে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। রাস্তার ধারে শীতের রাতে অসহায় মানুষগুলোর হাতে তুলে দেন শীতবস্ত্র এবং সাথে বড়দিনের কেক। মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস জানান, “অন্যান্য বছর শীতের সময় আমরা এই কর্মসূচি নিয়ে থাকি। কিন্তু এবছর বড়দিনের আগেই প্রচন্ড শীত। তাই, শীতবস্ত্র ছাড়াও কেক, উপহার তুলে দিয়ে বড়দিনের সবার মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছি।”
অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী শনিবার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের মোহনপুর ও দিয়াসার কাছে রাজ্য সড়কের পাশে গরিব ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার খুদে স্কুলপড়ুয়াদের কাছে পৌঁছে গেলেন সাত সকালেই। আজকের এই দিনটা যে বিশেষ একটি দিন বা বড়দিন, তাতো জানতোই না ওই কচিকাঁচারা। কিন্তু, শনিবার সকাল সকাল যখন বড়ো গাড়িটা থামলো গ্রামের ভিতর, আর গাড়ি থেকে বড় বড় কেক নিয়ে নামলেন এক বাবু, তখন আনন্দে মাতোয়ারা ওই খুদে পড়ুয়ারা। তারা তখন বুঝতে পারলো আজ হয়তো বিশেষ কোন দিন! এরপর, খ্রিস্টমাসের টুপিটা বিডিও নিজে হাতেই পরিয়ে দেন বাচ্চাদের। বলেন আজ বড়দিন! নতুন জামা থেকে শুরু করে শীতবস্ত্র, সবকিছুই এনেছিলেন বিডিও। বিডিওর এই উদ্যোগে খুশি এলাকার সমস্ত মানুষ থেকে শুরু করে বাচ্চারা। শুধু বাচ্চাদেরই সব কথা শুনলেন না বিডিও, এলাকার মানুষের সমস্যার কথা শুনতে চাইলেন। তাঁদের পরামর্শ দিলেন, “কোন কিছু অসুবিধায় পড়লে সরাসরি বিডিও অফিসে যাবেন। বিডিওর সাথে কথা বলবেন। সমস্যার কথা বলবেন। আপনাদের কাজ করার জন্যই সরকার আমাকে বেতন দেয়। আপনাদের পরিষেবা দেওয়ার জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছে। তাই, প্রয়োজনে আপনারা সরাসরি আমার কাছে আসুন।” বিডিওর কথা শুনে হতবাক এলাকার মানুষ! এতদিন তো কাজের প্রয়োজনে বিডিও অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে! আর এই বিডিও বলে কিনা, “আপনাদের জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছে”! সত্তরোর্ধ্ব ধর্মা সরেন বলেন, “জীবনে কোনদিন এই ধরনের কথা কোন বিডিও’র কাছ থেকে শুনিনি ! পরিষেবা পাই বা না পাই বিডিওর এই কথা খুব ভালো লাগলো”।