thebengalpost.net
হতবাক এলাকাবাসী :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ মার্চ: পিছমোড়া করে বাঁধা দু’টো হাত। কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত জড়ানো রয়েছে সেলোটেপ। মুখে ও শরীরে মাখানো হয়েছে কালি। আর এভাবেই বছর ১৫’র এক স্কুলছাত্রকে ঘোরানো হল মেদিনীপুর শহরের অলিতে গলিতে। হতবাক পথচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা! তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, ‘ছেলেটি কি চুরি করেছে নাকি?’ কেউ প্রশ্ন করলেন,’ওকে এরকম শাস্তি দিচ্ছ কেন?’ উত্তরে ভেসে এলো, ‘আজ ওর জন্মদিন! আমরা জন্মদিন পালনে বেরিয়েছি।’ এরকম ‘অভিনব’ উপায়ে জন্মদিন পালন (Birthday Celebration) দেখে তাজ্জব এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনাটি শিল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতির শহর মেদিনীপুরের (Midnapore Town)। আর, ওই ছেলেরা শহরের নামকরা দু’টি বয়েজ স্কুলের ছাত্র।

thebengalpost.net
অদ্ভুত স্টাইলে জন্মদিন পালন:

সম্প্রতি, ১৫ তম জন্মদিন ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের নামকরা একটি বয়েজ স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রের। ওই ছাত্রের বাড়ি শহরেরই বরিশালকলোনী এলাকায়। তাকে জন্মদিনের ‘সারপ্রাইস’ দেবে বলে, প্রায় ১০-১২ জন বন্ধু মিলে তাকে ফোন করে ডাকে কোতবাজার এলাকায়। ছেলেটি সেখানে গেলে বন্ধুরা সবাই মিলে তাকে সত্যি সত্যিই ‘চমকে’ দেয়! প্রথমে জোর করে তার জামা খোলা হয়। তারপর হাতদুটো পিছনে বাঁধা হয়। হাতদুটি পিছমোড়া অবস্থায় কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত সেলোটেপ জড়ানো হয়। তারপর বন্ধুরা সবাই মিলে ওই ছাত্রটির মাথায় ডিম ফাটিয়ে ও মুখে কালি মাখিয়ে তাকে রাস্তায় বের করে। ওই অবস্থাতেই তাকে নিয়ে ঘোরানো হয় গোটা কোতবাজার এলাকা। বন্ধুদের জন্মদিন পালনের নমুনা দেখে কার্যত ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা ছাত্রটির। কাঁদোকাঁদো গলায় সে জানায়, “এটা জন্মদিন নয়, আমার মৃত্যুদিন পালন করা হচ্ছে!”

thebengalpost.net
অত্যাচারিত ছাত্র :

তবে, এভাবে কেন জন্মদিন পালন? বন্ধুদের দাবি, এটাই এখন ট্রেন্ড (Trends)! সর্বত্র এটাই চলছে। কোথা থেকে শিখল তারা এই ট্রেন্ড? তাদের উত্তর, মেদিনীপুর কলেজ মাঠে সিনিয়র দাদারা এভাবেই নিজেদের বন্ধুদের জন্মদিন পালন করে। তাছাড়া, ফেসবুক তো আছেই! বন্ধুদের দু’একজন আবার ভিডিয়ো করে গোটা ঘটনাটির। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়াই নাকি তাদের মূল উদ্দেশ্য! বন্ধুদের প্রত্যেকের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। অধিকাংশই মেদিনীপুর শহরের নামকরা দু’টি বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। ফলে, এই বয়সে অদ্ভুত এই ‘আচরণ’ বা বিকৃত ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে দেওয়ায় উঠছে প্রশ্ন। তৈরি হয়েছে বিতর্ক। লজ্জায় মাথা হেঁট হচ্ছে বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুরের! মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও কিছু ভাইরাল করে দিয়ে প্রচারের আলোয় আসার নেশা চেপে বসেছে এইসব অল্পবয়সীদের মধ্যে। তাই, ভাইরাল হওয়ার লক্ষ্যে জন্মদিন পালনেও বিকৃত জিনিসপত্র আমদানি করছে তারা! ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম ওই ছেলেটিকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, পরে দেখলাম জন্মদিন পালন হচ্ছে। এইভাবে জন্মদিন পালন জীবনে প্রথম দেখলাম! নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই।’ তবে, বিষয়টিকে আবার গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না অনেকেই! তাঁদের দাবি, ‘ওরা নিজেদের মধ্যে মজা করে জন্মদিন পালন করছে, করতেই পারে।’ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের (MMCH) মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (Psychiatrist) ডাঃ কাবেরী ভট্টাচার্য বলেন, “কেন এরকম করছে ভালো করে তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে, বিষয়টি একেবারেই স্বাভাবিক নয়! উচিতও নয়। এর ফলে, অপর বন্ধুর যে কষ্ট হচ্ছে বা সম্মানহানি হচ্ছে, তা বোঝার মতো শক্তি এই বয়সের ছেলেমেয়েদের নেই! বিষয়টা মজার আকারে করলেও, ওই ছেলেটির উপর তা মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এটা একধরনের র‍্যাগিং (Ragging) এর মতো বিষয়। অনেক ছেলেমেয়ে এর ফলে ডিপ্রেশেনে (Depression) চলে যেতে পারে! তাই, ধরনের বিষয়ে শিক্ষক মশাই ও বাড়ির লোকেদের নজর দেওয়া উচিত।”

thebengalpost.net
হতবাক এলাকাবাসী :