তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ এপ্রিল: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্য জমি বেচে লক্ষ লক্ষ টাকা জমা রেখে ছিলেন সমবায়ে। প্রয়োজনের সময়ে এখন সমবায় টাকা ফেরত দিচ্ছে না। চরম বিপাকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার মীনা পাল। নিজের গচ্ছিত টাকা ফিরে পাবার জন্য থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলেনি সুরাহা, টাকা না পেয়ে চরম হতাশায় মীনার পরিবার। এমনই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ধুলিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মীনা পালের সঙ্গে।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে গ্রামের শ্রীনগর ঠাকুর হাটি সমবায় সমিতিতে এক মাত্র ছেলে তুহিন পালের চিকিৎসার জন্য নিজেদের চাষের জমি বেচে ৮ লক্ষ টাকা জমা রেখেছিলেন মীনা দেবী। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য সমবায় সমিতি থেকে সময় মতো টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু, বর্তমানে সমবায় সমিতি থেকে ২ বছর ধরে কোন টাকা তুলতে না পারায়, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, দ্রুত সমবায় কর্তৃপক্ষ তাদের টাকা ফেরত দিক। এমনই দাবি নিয়ে বারে বারে সমবায় দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসন ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন তাঁরা। তবে, মেলেনি কোনো সুরাহা!
কিন্তু কেন এই সমস্যা? জানা যায় কয়েক বছর আগে সমবায় সমিতির তৎকালীন বোর্ড মেম্বাররা সমবায় দপ্তরের টাকা ঋণ দিয়েছিল বেশ কিছু ব্যবসায়ী ও কোল্ডস্টোরেজে মালিকদের। প্রায় কয়েক কোটি টাকা সেই ঋণের পরিমাণ। এদিকে, শাসকদল ঘনিষ্ঠ ওই সমস্ত ব্যবসায়ী ও স্টোর মালিকরা সমবায় সমিতির টাকা পরিশোধ না করায়, সমবায় সমিতির লাটে ওঠার উপক্রম! আর, এর ফলেই মীনা দেবীর মতো একাধিক মানুষ পড়েছেন সমস্যায়। তাদের গচ্ছিত টাকা ফেরত পাচ্ছেন না! এই নিয়ে বেশ কয়েকবার সমাবায় সমিতি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান সমস্যায় পড়া গ্রাহকরা।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে ক্ষমতায় থাকে যে দল, তারাই পরিচালনা করে এই সমবায়গুলি। এদিকে, এই বিষয়ে ব্লক সমবায় কৃষি আধিকারিক অর্পিতা চক্রবর্তী বলেন, “জেলাশাসক থেকে শুরু করে সকলকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমরা দেখছি দ্রুত কিভাবে ফেরত দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা হবে।” তবে, প্রশ্ন উঠছে কাদের মদতে, কিসের ভিত্তিতে, কোটি কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হলো, এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের? দাবি, তদন্ত করে দেখা হোক এই ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সমবায় সমিতি নিয়ম-নীতি মেনে ঋণ দিয়েছে কিনা। নাকি এর পেছনে অন্য কোন রহস্য আছে! যদিও, শাসক দলের নেতাদের মদতেই এই দুর্নীতি বলে দাবি বিজেপির।