দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ মে:”এখনও অঙ্কুর যাহা/ তারি পথপানে/ প্রত্যহ প্রভাতে রবি/ আশীর্বাদ আনে।” রবি-কবির এই স্মরণসুন্দর পংক্তি-ই যেন, পঁচিশে বৈশাখের (৯ মে) গোধূলি বেলায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল মেদিনীপুরের গ্রামে। সৌজন্যে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আম্মা জনসেবা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ‘অঙ্কুর পাঠশালা’। আর, অঙ্কুরের কচিকাঁচাদের কাছে জ্ঞানের ‘কিরণ’ পৌঁছে দিতে প্রধান উদ্যোগ যিনি নিয়েছেন, তিনি এলাকারই যুবক ফারুক আলী। হ্যাঁ, ফারুক ও তার সহযোগীদের শিক্ষাদানেই সোমবার (৯ মে) থেকে আলোকিত হতে শুরু করেছে, মেদিনীপুর গ্রামীণের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বেলিয়া গ্রাম। ‘অঙ্কুর’ এক বিনামূল্যের পাঠশালা। দারিদ্র্য আর অতিমারীর নিষ্ঠুর দহনে স্কুল ছুট হয়ে যাওয়া, বিদ্যালয়ের মুখ না দেখা কিংবা ‘বর্ণপরিচয়’ প্রায় ভুলতে বসা কচিকাঁচাদের নিয়মিত পাঠ দান করতেই এই উদ্যোগ। শুধুই প্রথাগত শিক্ষাদান নয়, ছড়া-গান-খেলাধুলার মধ্য দিয়ে অন্ধকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৌন-মলিন মুখগুলিতে পরিপূর্ণতার হাসি ফুটিয়ে তোলাই লক্ষ্য ফারুক-দের।
সোমবার (৯ মে), রবীন্দ্র জয়ন্তী’র দিন পড়ন্ত বিকেলে এই বিনামূল্যের পাঠশালার উদ্বোধন হল, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গুড়গুড়িপাল সংলগ্ন বেলিয়া গ্রামে। রবি প্রণাম আর কচিকাঁচাদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হল ‘অঙ্কুর পাঠশালা’। আম্মা জনসেবা সোসাইটির ফারুক, অরিন্দম, সুমি, সুদীপ্তা, সালমা-দের সুরে সুর মিলিয়ে কচিকাঁচারাও গেয়ে উঠলো, ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’। নেচে উঠলো, ‘ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে’-র তালে তালে। রবি ঠাকুরের ছড়া, কবিতা-তো ছিলোই। ছোট্ট পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হল, বই, খাতা, পেন্সিল এবং চকলেট। রবি আলোয় বিকশিত হওয়ার দিনে, এই পিছিয়ে পড়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো শিক্ষার আলো। ৪০-টি শিশুকে নিয়ে শুরু হল বিনামূল্যের এই অঙ্কুর পাঠশালা। ছিলেন, সমাজকর্মী প্রতাপ বিশ্বাস সহ গ্রামের পুরুষ-মহিলারা। আম্মা জনসেবার পক্ষে সুমি বিশ্রাম বললেন, “দারিদ্র্য, অসহায়তা আর অতিমারির করাল গ্রাসে প্রত্যন্ত এই সমস্ত গ্রামের বহু শিশু’ই স্কুল ছুট হয়েছে। আদিবাসী ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রামের শিশুরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে আজও বঞ্চিত। অনেকেই অনিয়মিত ভাবে স্কুল যায় ঠিকই, প্রতিদিন পড়াশোনার অভ্যেস নেই। আর, শিক্ষা স্বরূপ মেরুদণ্ডটা ভেঙে যাওয়ার কারণেই বহুগ্রাম আজও অন্ধকারে ডুবে। সেদিক থেকে আমাদের এই সামান্য প্রচেষ্টা। শিক্ষক হিসেবে এগিয়ে এসেছেন ফারুক দা ও অন্যান্যরা। সহৃদয় মানুষের সাহায্য পেলে বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া গ্রামে এই ধরনের পাঠশালা চালু করার ইচ্ছে আছে আমাদের।”