মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ মে:হঠাৎ করেই জ্বর, বমি! দেখানো হল স্থানীয় চিকিৎসককে। তিনি কিছু টেস্ট লিখে দেন এবং জেলা শহর মেদিনীপুরের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন। এরপর, দেখানো হয় মেদিনীপুর শহরের নামকরা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ-কে। তাঁর সন্দেহ হওয়ায় তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি করার নির্দেশ দেন বছর ছয়েকের ছোট্ট রিকেশ-কে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরীক্ষা করানো হয়। দেখা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহল গোয়ালতোড়ের বাসিন্দা তথা বুলানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র রিকেশ নন্দন মারণ রোগ ‘ব্লাড ক্যান্সারে’ আক্রান্ত! দিন পনেরো আগে এভাবেই যেন ‘মাথায় বাজ’ পড়ে নন্দন পরিবারের! তবে, ভেঙে পড়লে তো চলবেনা! তাই, চিকিৎসকদের পরামর্শে মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রিকেশ-কে। সেখানে ইতিমধ্যে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে, মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিপুল খরচ। এই পরিস্থিতিতেই, রিকেশের স্কুলের (বুলানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়) শিক্ষকদের মারফত খবর পেয়ে, দরিদ্র এই পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন জেলার অন্যতম ‘মানবদরদী’ ব্যক্তিত্ব তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের (DPSC) চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই। সোমবার দুপুরে রিকেশের পরিবারের হাতে তুলে দিলেন নিজের এক মাসের বেতন স্বরূপ প্রায় ৫২ হাজার টাকা।

thebengalpost.net
রিকেশের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিলেন কৃষ্ণেন্দু বিষই:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রিকেশের বাবা রাজীব নন্দনের গোয়ালতোড় রাজ্য সড়কের পাশে সামান্য তেলেভাজার দোকান। ‌মা রুমা নন্দন গৃহবধূ। দুই সন্তানের ছোটো হল রিকেশ। ছেলের চিকিৎসার জন্য নিজেদের যা কিছু ছিল বিক্রি করে ও‌ বন্ধক রেখে, রওনা দিয়েছেন সুদূর মুম্বাইয়ে। কিন্তু, দুরারোগ্য এই ব্যাধিকে জয় করতে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন! ইতিমধ্যে, বিভিন্ন ভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছে বা অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন থেকে সহৃদয় ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের মধ্যেই অন্যতম, পেশায় শিক্ষক তথা বর্তমানে ডিপিএসসি চেয়ারম্যানের (DPSC Chairman) দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষ্ণেন্দু বিষই। সোমবার রিকেশের চিকিৎসার জন্য নিজের এক মাসের মাসের মাইনে তুলে দিলেন তিনি এবং জানালেন প্রয়োজনে আবারও সহযোগিতা করবেন। তবে, এই প্রথম নয়, মানবদরদী কৃষ্ণেন্দু এর আগেও নানাভাবে অসহায় ছাত্র-ছাত্রী ও পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ‌ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, বুলানপুর প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর এই ছাত্রের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

thebengalpost.net
মায়ের সাথে ছোট্ট রিকেশ:

সোমবার নিজের কার্যালয়ে অর্থাৎ জেলা সংসদ অফিসে রিকশের কাকু সন্দীপ নন্দন এবং ঠাকুমা তুষা নন্দনের হাতে চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই নিজের এক মাসের মাইনে স্বরূপ ৫১ হাজার ৯৭০ টাকা তুলে দিয়ে মানবতার নজির সৃষ্টি করলেন নিঃসন্দেহে! কৃষ্ণেন্দু বললেন, “আমি নিজে একজন শিক্ষক এবং একজন পিতা। তাই, এই ধরনের খবর পেলেই যথাসাধ্য পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ভবিষ্যতেও এভাবেই পাশে থাকার চেষ্টা করব। রিকেশের পরিবারকে জানিয়েছি, প্রয়োজনে সাধ্যমত আবারও সাহায্য করার চেষ্টা করব।” রিকেশের কাকু ও ঠাকুমা জানিয়েছেন, “ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করব না! ঈশ্বর ওনার মঙ্গল করুন। এই সাহায্য রিকেশের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক উপকারে আসবে।” ছলছল চোখে তাঁরা এও বললেন, যেহেতু দ্রুত এই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে, তাই চিকিৎসকদের মতে, সঠিক চিকিৎসায় রিকেশ সুস্থ হয়ে উঠবে! এদিকে, ছোট্ট রিকেশের জন্য পথে নেমেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে তৈরি একটি সমাজসেবী সংগঠনও। জেলা শহর মেদিনীপুরের বুকে টোটো নিয়ে প্রচার চালিয়ে, তারা যথাসাধ্য অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন জানাচ্ছে। এই মুহূর্তে, সকলেই চাইছেন এবং প্রার্থনা করছেন রিকেশ যেন মুম্বাই থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসে!

thebengalpost.net
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের অফিসে :

thebengalpost.net
রিকেশ (ঋকেশ) এর পরিবারের পক্ষ থেকে সাহায্যের আবেদন :