দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম, ৪ সেপ্টেম্বর: রাত পোহালেই শিক্ষক দিবস। ‘জাতীয় শিক্ষক’ তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের ১৩৪ তম জন্মদিবস। তার আগেই জঙ্গলমহলের এক শিক্ষকের মানবিকতার ছটায় আলোকিত হল ‘শিক্ষক দিবস’। ক্যান্সার আক্রান্ত এক ছাত্রের পাশে দাঁড়ালেন ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠে কর্মরত মানবদরদী শিক্ষক হেরম্বনাথ চক্রবর্তী।
বাঁকুড়া জেলার রায়পুর ব্লকের জুনবনি গ্রামের বাসিন্দা শুভ দাস। নেপুরা কুমারআড়া সম্মিলনী বীণাপানি বিদ্যাপীঠের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে তার শরীরে মারণ রোগের অস্তিত্ব! জীবন যুদ্ধের সাথে লড়াই করা এই পরিবারটি তাই এখন কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন। মা,বাবা ও ছোট্ট বোনকে নিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার। শুভর অন্যান্য বন্ধুরা যখন পড়াশোনা বা খেলাধুলায় ব্যস্ত তখন সে বাঁকুড়া থেকে অনেক দূরে কলকাতার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বছর তেরোর এই কিশোর স্বপ্ন দেখে, এই মারণ রোগকে হারিয়ে বিদ্যালয় জীবনের টিফিনের কোলাহল, ঘণ্টাধ্বনি প্রভৃতির মধ্য দিয়ে আবার বন্ধুদের সাথে প্রাণচঞ্চলতায় মেতে উঠবে! মারণ রোগের বিরুদ্ধে বছর তেরোর এই কিশোরের লড়াইয়ের কথা জানতে পেরেই পরিবারটির সাথে নিজে থেকেই যোগাযোগ করেন মানবদরদী শিক্ষক হেরম্বনাথ বাবু এবং এই শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য দশ হাজার টাকা তার পরিবারের একাউন্টে পাঠিয়ে দেন।
অবশ্য, হেরম্বনাথ বাবুর এহেন মানবিক উদ্যোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুর, হুগলি, বর্ধমান, সাগরদ্বীপ এলাকাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে বহুবার দাঁড়িয়েছেন হেরম্ববাবু। করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কর্মহীন পরিবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্য, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার খরচ, শিক্ষার্থীদের পঠন উপযোগী বিভিন্ন উপকরণ তাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, হেরম্ব নাথ বাবুর বাড়ি বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা থানার হাড়মাসড়া গ্রামে। তাঁর বাবা পণ্ডিত তারানন্দ চক্রবর্তী ছিলেন বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানার জাম্বনি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদরদী ও মানবদরদী শিক্ষক। তারানন্দ বাবু ২০০১ সালের ৫ ই সেপ্টেম্বর দিনটিতে নতুন দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে তৎকালীন ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন “জাতীয় শিক্ষকে”র বিরল সম্মান। রাজ্য সরকারের কাছ থেকেও একাধিকবার সম্মানিত হয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালে কলকাতা সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তারানন্দ বাবু পেয়েছেন বিশেষ সাম্মানিক। হেরম্ব নাথ বাবু জানান, “এই সমস্ত জনহিতকর সামাজিক কর্মকাণ্ডে বাবা বরাবরই পাশে থেকেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং এই ভাবেই এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।”