দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৭ জানুয়ারি: “অনয় ছুটেছে অনয়, শববাহী শকট নিয়ে ছুটেছে অনয়।” সংক্রমণের আবহে শববাহী গাড়ি নিয়ে যেতে চাইছেন না চালকরা, তাই অনয়ই ভরসা! প্রসঙ্গত, করোনার তৃতীয় ঢেউ সারা রাজ্য ও দেশের সাথে সাথে মেদিনীপুর শহরেও আছড়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে হু হু করে বেড়েছে সংক্রমিতের সংখ্যা। অবশ্য, দ্রুত সুস্থও হয়ে উঠছেন অনেকে। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো অনেকেই হোম আইসোলেশনে আছেন। তবে, যাঁদের বেশ ভালো মতো উপসর্গ বা কো-মর্বিডিটি আছে, তাঁদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে। এদিকে, সংক্রমিত এলাকাগুলিতে প্রশাসনের নির্দেশে করা হচ্ছে মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন। সেই সময় পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে রেড ভলেনটিয়ার্স সহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন কোভিড আক্রান্ত পরিবারগুলিকে সাহায্য করার জন্য। সেই প্রথম ঢেউ থেকে শুরু করে তৃতীয় ঢেউ অবধি, এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রে মেদিনীপুর শহরের ৯ নং (কর্ণেলগোলা সংলগ্ন) ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যে মানুষটির আন্তরিক স্নেহ ও ভালবাসার স্পর্শ বারবার পেয়েছেন তিনি অনয় মাইতি, ৯ নং ওয়ার্ড নাগরিক উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক। খাদ্যসামগ্রী, মাস্ক, স্যানিটাইজার তুলে দেওয়া ছাড়াও এবার তাঁকে নতুন ভূমিকাতেও দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি, ২০ ডিসেম্বর, ওয়ার্ড বাসীকে তিনি একটি বিনামূল্যের শববাহী শকট উপহার দিয়েছেন। তবে, ওমিক্রণ ভ্যারিয়েন্টের দাপটে সংক্রমণ একটু বাড়তে থাকায়, মাঝেমধ্যেই সেই শববাহী শকটের জন্য চালক পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো ভয়ে অনেকেই না বলছেন মৃতদেহ নিয়ে যেতে! সেই সময়েও ত্রাতা হয়ে উঠছেন অনয় নিজেই। গলায় গামছা ঝুলিয়ে শববাহী চারচাকা গাড়ি চালিয়ে রওনা দিচ্ছেন শ্মশানের উদ্দেশ্যে। ‘সব্যসাচী’ অনয়ই যে তাঁদের শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার একমাত্র ভরসা, তা মানছেন এলাকাবাসী।

thebengalpost.net
শববাহী শকট:

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন সমাজসেবার সাথে যুক্ত মেদিনীপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা নাগরিক উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক অনয় মাইতি নিজে শববাহী গাড়িতে করে মৃত ব্যক্তিকে দাহ করতে নিয়ে যাচ্ছেন। তা মানছেন এলাকাবাসী প্রত্যেকেই। গত একমাস আগেই, ২০ ডিসেম্বর এই শববহী গাড়িটি ওয়ার্ডবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি নিজেই দান করেছিলেন। এবার, সংক্রমণের আবহে যখন চালক পাওয়া যাচ্ছে না, অনয় নিজেই চালক রূপে আবির্ভূত হচ্ছেন। এমনকি দুঃস্থ পরিবার হলে, দাহ করার সমস্ত ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন অনয়। না, সমাজ সেবার কাজ শুধু করোনা আবহে নয়, সারা বছর ধরেই চালিয়ে যান অনয় মাইতি। একথায় এক বাক্যে স্বীকার করেন এলাকার প্রত্যেকেই। শীতকালে শীতবস্ত্র, পুজোর আগে নতুন জামা-কাপড়, বর্ষার সময় দরিদ্রদের ত্রিপল দান করা ছাড়াও, সারা বছর ধরেই চলে তাঁর সামাজিক কর্মকান্ড। আর, অতিমারীর প্রথম ঢেউ থেকে একাধিকবার তিনি খাদ্য সামগ্রী, মাস্ক ও স্যানিটাইজার তুলে দিয়েছেন দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারগুলির হাতে। এছাড়াও, দায়িত্ব নিয়ে একাধিকবার ওয়ার্ড স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থাও করেছেন। আর, এবার তো একেবারে নতুন ভূমিকায়। শববাহী শকটের চালক রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাইতো এলাকাবাসী বলছেন, বিপদে-আপদে অনয়ই আমাদের আশ্রয়, আমাদের ভরসা!

thebengalpost.net
চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অনয় নিজেই :

thebengalpost.net
অনয় মাইতি :