দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ ডিসেম্বর:’ভারতরত্ন’ অটল বিহারী বাজপেয়ী-কে স্মরণ করে, খড়্গপুরবাসীর প্রিয় বিধায়ক হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় শীতের রাতে ‘উষ্ণতা’ নিয়ে পৌঁছে গেলেন অসহায় ফুটপাত বাসীর কাছে। ঠাণ্ডায় কাঁপতে থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের গায়ে চাপিয়ে দিলেন কম্বল। আর, ভবঘুরে ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলির হাতে তুলে দিলেন শীতবস্ত্র। বললেন, “খড়্গপুর শহর যখন পাঁচ-পাঁচবার জলে ডুবে গেছে, তখনও আপনারা দেখেছেন আমি জলে দাঁড়িয়ে অসহায় মানুষের উদ্দেশ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এদিনও, আমরা প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা এই দেশের ‘গর্ব’ ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ী-র জন্মদিবস উপলক্ষে এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালাম।” প্রসঙ্গত, ২৫ ডিসেম্বর, শনিবার ছিল ‘ভারতরত্ন’ অটল বিহারী বাজপেয়ী-র জন্মদিবস। কিন্তু, খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হিরণ সেদিন রাতে খড়্গপুরে পৌঁছেছেন। রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী’র প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন। আর, দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে, রাতে পালন করলেন সমাজসেবামূলক কর্মসূচি। রাত্রি সাড়ে দশটা-এগারোটা নাগাদ পৌঁছে গিয়েছিলেন খড়্গপুর স্টেশন এবং স্টেশন সংলগ্ন বিভিন্ন ফুটপাত গুলিতে, যেখানে অসহায় মানুষজন প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে কষ্ট করে রাত কাটাচ্ছিলেন! স্বীকারও করলেন সেকথা, “গতকাল ছিল তাঁর জন্মদিন, তাঁর মতো মহান জননেতা-কে স্মরণ করেই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। আমি অনেকবার এই রাস্তা দিয়ে গেছি, দেখেছি এরা কিরকম কষ্ট করে রাত কাটায়! আর দিনের বেলা এলে এঁদের আপনি পাবেন না। তাই, রাতেই এসেছি। সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।”

thebengalpost.net
শীতের রাতে’উষ্ণতা’নিয়ে বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় :

তবে, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রবিবার পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে দলের সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ খড়্গপুর থেকে বিদায় নেওয়ার পরই এই কর্মসূচি পালন করছেন বিধায়ক হিরণ। সর্বোপরি, রবিবার খড়্গপুরেই ছিলেন মেদিনীপুরের সংসদ তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তা সত্ত্বেও, দু’জনকে একসঙ্গে কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেও। শনিবার ও রবিবার যথাক্রমে মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন দিলীপ। সুশাসন দিবস পালন, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হাতে কেক তুলে দেওয়া ও মেদিনীপুরে দলের নতুন জেলা সভাপতি (তাপস মিশ্র)-কে বরণ করে নেওয়া, প্রভৃতি নানা কর্মসূচি পালন করে রবিবার বিকেলেই বিদায় নিয়েছেন তিনি। বিধায়ক হিসেবে কিংবা বিজেপি রাজ্য নেতা হিসেবে কোনো কর্মসূচিতেই দেখা যায়নি হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়-কে। তিনি অবশ্য বরাবরই এসবের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসেন। তাই, দায়িত্বশীল বিধায়কের মতো তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্রের সবথেকে অসহায় ও দীন-দরিদ্র মানুষগুলির কাছে গিয়ে বার্তা দিতে চেয়েছেন, “আমি তোমাদেরই লোক”। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগ জন হয়তো ভোটার নন, তবে তাঁরা ‘অসহায় মানুষ’! হিরণ নিজেও বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সেকথা। সবমিলিয়ে, ২০২১ এর শেষ লগ্নেও খড়্গপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা মেদিনীপুরের সাংসদ আর খড়্গপুরের বর্তমান বিধায়কের মধ্যে “দূরত্ব সেই থেকেই গেল”! রবিবার রাতে নিজের বক্তব্যে সেই ইঙ্গিতও অবশ্য দিয়ে রেখেছেন হিরণ। তিনি জানিয়েছেন, “রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাক। আমরা মানুষের পাশে থাকব। সে রাজনীতি থাক বা না থাক”! খড়্গপুর শহরের (সদরের) বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ইঙ্গিতটা কোন দিকে করতে চেয়েছেন, তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি রাজনীতি-সচেতন খড়্গপুরবাসীর।

thebengalpost.net
খড়্গপুর স্টেশনে হিরণ :

thebengalpost.net
নতুন জেলা সভাপতি তাপস মিশ্র-কে স্বাগত জানালেন দিলীপ ঘোষ :