দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ জুন: সদ্য মিটেছে নির্বাচন পর্ব। আর তার মধ্যেই ফের দিনে-দুপুরে ‘শুট আউট’-কে কেন্দ্র করে আবারও শিরোনামে ‘রেল শহর’ খড়্গপুর। মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিবালোকে খোদ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হলেন এক যুবক। মঙ্গলবার পৌনে তিনটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর শহরের ১৫-নং ওয়ার্ডের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের ঠিক পাশেই একটি সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো গাছের তলায়। বি.সন্তোষ কুমার নামে এক যুবককে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা চার-পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। একটি স্কুটিতে করে তিন দুষ্কৃতী এসেছিলেন বলে অভিযোগ সন্তোষ কুমার সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। দুষ্কৃতীদের মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল এবং প্রত্যেকের কাছেই একটি করে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। গুলি চালিয়েই ওই এলাকা থেকে চম্পট দেয় তিন দুষ্কৃতী। গুলিবিদ্ধ যুবককে দ্রুত খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। যুবকের কোমরের নিচে গুলি লেগেছে বলে দাবি। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যালে তাঁর অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, হাসপাতালের বেডে শুয়ে সন্তোষ কুমার দাবি করেন, তিনি তৃণমূল কর্মী। অন্যান্য কিছু কর্মীর সাথে বসে কথা বলছিলেন দলীয় কার্যালয়ের ঠিক পাশেই গাছের তলায়। সেই সময় হঠাৎ করে একটি স্কুটিতে চেপে তিন দুষ্কৃতী আসে এবং এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। বাকিরা ছুটে পালিয়ে গেলেও, পা’য়ে পুরানো আঘাত থাকার কারণে ছুটতে গিয়ে পড়ে যান সন্তোষ! দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে চার-পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় বলে দাবি। একটি গুলি তাঁর কোমরের নিচে লেগেছে বলেও জানিয়েছেন সন্তোষ কুমার। দুষ্কৃতীদের মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল বলেও দাবি করেছেন সন্তোষ। যদিও, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ইতিমধ্যে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন। দুষ্কৃতীদের বাহন (স্কুটি)-টিও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার। এদিকে, শুট-আউটের বিষয়ে মেদিনীপুর শহরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানান, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই! একান্তই ব্যক্তিগত বিবাদ। ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। আমাদের আবেদন, দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হোক এবং সঠিক তদন্ত করা হোক।” স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই গোষ্ঠীর বিবাদের কারণেই এই শুট-আউটের ঘটনা!
উল্লেখ্য যে, লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই খড়গপুর শহরের ১৫নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর (কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন) বান্তা মুরলিধর রাওয়ের বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী-কে মারধর করে গয়না লুট করে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই ওই ওয়ার্ডেরই প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা একদা রামবাবু-ঘনিষ্ঠ অঞ্জনা সাঁকরে-র স্বামী রঞ্জিত-কে মারধর করা হয়েছিল। এবারও তেমনই কোনও গোষ্ঠী-বিবাদ, নাকি রেল শহরের মাফিয়াদের পুরানো কোনও বিবাদ; তা নিয়েই চলছে জল্পনা! ঘটনা ঘিরে নতুন করে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়েছে ‘রেল শহর’ খড়্গপুরে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী (নির্বাচনের দায়িত্বে আসা)।