দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৮ জুন: স্বামী বিবেকানন্দের কথায়- “এরা এক মুঠো ছাতু খেয়ে দুনিয়া উলটে দিতে পারবে, আধখানা রুটি পেলে ত্ৰৈলোক্যে এদের তেজ ধরবে না…!” সম্প্রতি ‘অরণ্য সুন্দরী’ ঝাড়গ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে (বড়ামারা, ঝাউড়িশোল, জরীঘাটি, চাঁদধুয়া, জামবনী, ভালুকচুয়া ) প্রায় ৩০০ জন শিশু-কিশোরদের রোবোটিক্সের পাঠ দিতে এসেছিলেন ‘মেদিনীপুরের গর্ব’ বিজ্ঞানী অনির্বাণ দাস। বেসিক ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে ইন্টারনেট অফ থিংসের ছোট ছোট অ্যাপ্লিকেশন হ্যান্ডস অন তৈরি করে দেখান তিনি; যাতে কচিকাঁচারা আগ্রহী হয়। কলকাতার ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে ইনোভেশন কাউন্সিলের পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক তথা ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. অনির্বাণ দাস বলেন, “এক অদ্ভুত জীবনীশক্তি রয়েছে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে।”
অখন্ড মেদিনীপুরের (পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার) ‘গর্ব’ বিজ্ঞানী অনির্বাণ দাস এও বলেন, “মহাকাশ থেকে ডিফেন্স সেক্টর, ভারতবর্ষ আজ সামগ্রিকভাবে সারা বিশ্বের দরবারে নিজেদের সেরার সেরা প্রমাণ করে চলেছে। ভারতের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড আমরা সঠিকভাবে পেতে পারি তখনই, যখন আমাদের ভবিষ্যত নাগরিকদের যথাযথ শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত (স্কীলড) করে তুলতে পারবো। সেজন্য প্রথমেই প্রয়োজন উচ্চ শিক্ষায় গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও বাড়ানো।” রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষার গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও হলো ১৮.৭ শতাংশ, যেখানে জাতীয় হার হলো ২৫.৮ শতাংশ। তাই যতটা সম্ভব এই তথাকথিত পিছিয়ে পড়া প্রজন্মকে শিক্ষার আঙিনায় আনতে হবে বলে জানান তিনি। দুই দশক ধরে সেই লক্ষ্যেই অঙ্গীকারবদ্ধ ড. দাস। মূলত, দুই মেদিনীপুর এবং জঙ্গলমহল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন গ্রাম সহ হাওড়া, বর্ধমান, উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার , কুচবিহার জুড়ে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক ও মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে ভরসা ও বিশ্বাসের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন যাতে তারা শিক্ষার মূল স্রোতে সামিল হতে পারে এবং দেশের “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড”-র অংশ হতে পারে।
উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল একবার কলকাতার রাজভবনে অবস্থানকালে তাঁকে (ড. দাসকে) আমন্ত্রণ জানান এবং গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও নিয়ে কাজ করার বিষয়ে তাঁর প্রশংসা করেন। ড. অনির্বাণ দাস বর্তমানে কলকাতার ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে ইনোভেশন কাউন্সিলের পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। ২০০৭ সালে তিনি এইচসিএল টেকনোলজিস লিমিটেডের একজন সফ্টওয়্যার প্রকৌশলী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১২ সালে এনআইটি দুর্গাপুর থেকে আইসিটি-তে পিএইচডি করেন। সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন, ইউরেশিয়া রিসার্চ, ইউএসএ-এর সাম্মানিক ভাইস প্রেসিডেন্ট, আরএসএ-এর ফেলো, আইইটিই ইন্ডিয়ার ফেলো, আইএসআরডি ইউকে-এর ফেলো এবং ইন্ডিয়ান ক্লাউড কম্পিউটিং অ্যাসোসিয়েশনের ফেলো হয়েছেন। তিনি ১২ টি বই লিখেছেন এবং ১ টি গবেষণা প্রকল্প ‘ডিএসপি এসইআরবি’ সরকারের অর্থায়নে করেছেন। ভারতের ৭৬ টি পেটেন্ট (ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক) প্রকাশিত এবং নিবন্ধিত এবং ৬১ টিরও বেশি গবেষণা প্রকাশনা করেছেন তিনি। যেগুলির বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল এবং সম্মেলনে প্রকাশিত হয়েছে।