দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ নভেম্বর: একই দিনে দু’বার ফুল-বদল জঙ্গলমহল শালবনীর শ্যামলী সিং সহ তাঁর পরিবারের। শনিবার দুপুরে মেদিনীপুর বিধানসভার অধীন শালবনী ব্লকের ৯নং কাশীজোড়া অঞ্চলের দেউলকুন্ডাতে মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষের হাত ধরে তৃণমূল কর্মী শ্যামলী সিং-র পরিবার সহ মোট ৩টি পরিবার BJP-তে যোগদান করে বলে দাবি করা হয় বিজেপির তরফে। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন BJP-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী শুভজিৎ রায় সহ অন্যান্যরা। সন্ধ্যা নাগাদ সেই শ্যামলী সিং-ই কাশীজোড়া অঞ্চলের পারুলিয়াতে অনুষ্ঠিত তৃণমূলের পথসভাতে ফের জোড়াফুলের পতাকা হাতে তুলে নেন। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি, রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সিংহ প্রমুখ। শ্যামলীর দাবি, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে পদ্ম-পতাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই ভুল শুধরে নিতে, তিনি নিজে ছুটে এসেছেন ‘জোড়াফুল’ হাতে তুলে নিতে!
এ নিয়ে শালবনী ব্লকের বিজেপি নেতা অসিত দাস দাবি করেছেন, শ্যামলী সিং কাশীজোড়া অঞ্চলের সক্রিয় বিজেপি কর্মী ছিলেন। পরে তৃণমূল তাঁকে ভুল বুঝিয়ে দলে টানে। শনিবার নিজের ভুল বুঝতে পেরে শ্যামলী নিজে দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপি-তে ফিরতে চান। অপরদিকে, শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সিংহ বলেন, শনিবার দুপুরে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ যখন কাশীজোড়া অঞ্চলের দেউলকুন্ডা গ্রামে প্রচারে এসেছিলেন, সেই সময় মাঠে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন শ্যামলী সিং। ওঁর পরিবার দীর্ঘদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে যুক্ত। বিজেপির মিছিল দেখে তিনি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যান। দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপি-র বাইক বাহিনী তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে ডেকে হাতে বিজেপির পতাকা ও মালা পরিয়ে ঘোষণা করেন তিনি বিজেপিতে যোগদান করলেন! সেই ঘটনার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই কাশীজোড়া অঞ্চলের পারুলিয়া গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের পথসভায় উপস্থিত হন শ্যামলী সিং। নিজে মাইক হাতে নিয়ে এই বিষয়টি স্পষ্ট করেও দিয়েছেন তিনি।” যদিও, শনিবার সন্ধ্যায় BJP-প্রার্থী শুভজিৎ রায় দাবি করেছেন, তৃণমূলের নেতারাই শ্যামলীকে ভয় দেখিয়ে পুনরায় তৃণমূলের ফিরিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত শনিবার (২ নভেম্বর)-ও শালবনী ব্লকের গড়মাল অঞ্চলের জাড়াতে বিকাশ সিং নামে এক কর্মীকে ঘিরে একই ঘটনা ঘটে বলে দাবি করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। বিকেলে জাড়া এলাকায় সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করে বিকাশ সিং। দু’দিন পরেই সেই বিকাশ ফের তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেয়। অন্যদিকে, শনিবার দুপুরে গড়মাল অঞ্চলের গোয়ালডিহিতে শতাধিক বিজেপি কর্মী তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী সুজয় হাজরার হাত ধরে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেয় বলে দাবি করা হয়েছে। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত, কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, জ্যোতিপ প্রসাদ মাহাত, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ প্রমুখ। সবমিলিয়ে জঙ্গলমহলের মাটিতে ‘যোগদান’-র ক্ষেত্রেও বিজেপি-কে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।