দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ ফেব্রুয়ারি: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের অন্যতম ঐতিহ্য লক্ষ্মী সরস্বতী পূজা ও হরিনাম সংকীর্তন। ঐতিহ্যমণ্ডিত এই পুজো দুশো বছরেরও প্রাচীন। এই পূজা ও হরিনাম উপলক্ষ্যে, মঙ্গলবার মেদিনীপুরের বিধায়িকা জুন মালিয়া উপস্থিত হয়ে ভোগ নিবেদন করেন। কূল পুরোহিত সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বিধায়িকাকে গ্রাম ও মন্দিরের ইতিহাস প্রসঙ্গে বলেন যে, বর্তমানে মহাশোল গ্রামের রাজপুত ‘ক্ষত্রিয়’ সিংহ পরিবারের পাঁচটি মূল অংশ। সেই তৃতীয় পুরুষ থেকেই চলে আসছে এই লক্ষ্মী ও সরস্বতী পুজো।

thebengalpost.net
লক্ষ্মী সরস্বতী পূজা :

সিংহ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এই সময় সকলে মিলে লক্ষ্মী সরস্বতীর আরাধনা ও চব্বিশ প্রহর ব্যাপী অখন্ড হরিনাম সংকীর্তনে মেতে ওঠেন তাঁরা। কথিত আছে, নয় পুরুষ আগে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পূজার প্রচলন হয়েছে। সেই থেকে বংশানুক্রমে এই পূজা চলে আসছে। গ্রামের ‘পাঁচবংশে’র সবথেকে বয়স্ক পুরুষ এই সিংহ বাড়ি-ই পূজোর মূল আহ্বায়ক হন। গ্রামের পক্ষে চিত্তরঞ্জন সিংহ, দুলাল চন্দ্র সিংহ, নিরঞ্জন সিংহ, নেপাল সিংহ এই বছরের পরিকল্পনা ও এই পূজার ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন। জানা গেছে, সিংহ বংশের আদি পুরুষ সৈজন সিংহ বিহার থেকে প্রায় সাত পুরুষ আগে বাংলায় এসে (মেদিনীপুরের) মহাশোল মৌজাতে (বর্তমানে শালবনী ব্লকের অধীন) জমি কিনে বসতি পত্তন করেন। তারপর মায়ের স্বপ্নাদেশ পান ঈশান সিংহ। পুরোহিত সজ্ঞয় বাবু বলেন, “কথিত আছে, মাঘ মাসের কোনো একদিন রাতে, বর্তমান মন্দির প্রাঙ্গনে রাত্রিযাপন করা গ্রামের কয়েকজন বয়স্কমানুষ ‘দুই দেবী রূপী বোন’ এর স্বপ্নাদেশ পান- এই স্থানে পুজো শুরু করার জন্য। সেই সময় মাঘ মাস ও সরস্বতী পূজা নিকটে হওয়ায়, দেবী লক্ষ্মী ও সরস্বতী পূজা শুরু হয়। সেই থেকেই মহাশোল গ্রামে দেবী লক্ষ্মী ও সরস্বতী পূজা এক কাঠামোর মধ্যে দাসদাসী সহ পূজিত হন। পরবর্তীকালে, চব্বিশ প্রহর ব্যাপী হরিবাসর এর আয়োজন করা হয়, এই পূজা উপলক্ষ্যে। তখনকার একচালার খড়ের মন্দির এখন অবশ্য হয়েছে কংক্রিটের।

thebengalpost.net
উপস্থিত বিধায়ক জুন মালিয়া :

বসন্ত পঞ্চমীর সকালে ঘট ডুবিয়ে মায়ের অঞ্জলি সম্পন্ন হয় বিকেল পাঁচটায়। তার পরের দিন থেকে এবার পাঁচদিন ব্যাপী অখন্ড হরিনামের আয়োজন হয়। এলাকার মানুষের একমাত্র ‘বিনোদন’ স্বরূপ এই পূজাতে স্বল্প পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়। এবার, তা কোভিড বিধি মেনে আরও ছোটো হয়েছে। মিষ্টি, জিলিপি, পাঁপড় সহ বিভিন্ন দোকানপাট বসেছে এবারও। তবে, মায়ের হাতে পাকানো গুড় দিয়ে চিঁড়ের নাড়ু এই মেলার বিশেষ আর্কষণ। প্রত্যেকদিন দুপুরে এলাকার নামী দামী কীর্তনীয়ারা ভোগকীর্তন নিবেদন করেন। এই উপলক্ষে শালবনী ব্লকের মহাশোলের সিংহ পরিবারের সদস্যরা ও তাদের সমস্ত আত্মীয়স্বজন এবং আশেপাশের জগন্নাথপুর, খেমাকাটা, ঝাঁটিয়াড়া, মন্ডলকূপী গ্রামের গ্রামবাসীরা ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনরা এসে উপস্থিত হন এবং মেলায় অংশগ্রহণ করেন। হরিনামের সমাপনের পর দু’দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এইভাবে পূজা ও হরিনাম সহ মেলা মোট ৭ দিনের হয়।

thebengalpost.net
ভোগ নিবেদন :