মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ মে: ২০২২ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে জেলা, রাজ্য এবং ইস্ট জোনের অ্যাথলেটিক মিটে পদক (সোনা, রুপো এবং ব্রোঞ্জ) জয় করে স্কুল এবং জেলাকে ‘গর্বিত’ করেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী ব্লকের ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই ছাত্র যথাক্রমে স্বদেশ মাহাত এবং সৌরভ দাস। বুধবার (৮ মে) প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিকের (HS Results 2024) ফলাফলেও তাক লাগিয়ে দিল স্বদেশ ও সৌরভ। ভাদুতলা স্কুলের এই দুই ছাত্র কলা বিভাগ থেকে এবার পেয়েছে যথাক্রমে- ৪৩০ (৮৬ শতাংশ) এবং ৪৩৪ (প্রায় ৮৭ শতাংশ)। শুধু তাই নয়, কলা বিভাগ থেকে বিদ্যালয়ে সৌরভ এবং স্বদেশ-ই যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল, পুষ্টিবিদ্যা, সংস্কৃত এবং শারীরবিদ্যা বিষয়ে সৌরভ পেয়েছে যথাক্রমে- ৮৫, ৯১, ৮০, ৮৩, ৮৫ ও ৯০। বেস্ট অফ ফাইভে পেয়েছেন ৪৩৪। অপরদিকে, স্বদেশ পেয়েছে যথাক্রমে- ৮৫, ৯০, ৮৬, ৮১, ৮২ ও ৮৭। বেস্ট অফ ফাইভে প্রাপ্ত নম্বর ৪৩০।
প্রসঙ্গত, শালবনী ব্লকের গোদামৌলি গ্রামের স্বদেশ এবং মেদিনীপুর সদর ব্লকের খয়েরুল্লাচকের সৌরভ দু’জনই জেলার অন্যতম সেরা দুই ক্রীড়াবিদ। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ‘স্টেট স্কুল অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ- ২০২৩’-এর ‘অনূর্ধ্ব ১৯’ (U-19) বিভাগের তিনটি বিভাগে ৩টি রূপো জয় করে স্বদেশ ও সৌরভ। সৌরভ ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতা ও দীর্ঘ লম্ফনে (লং জাম্পে) ২টি রৌপ্য পদক এবং স্বদেশ ৩০০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় একটি রূপো জয় করে। এছাড়াও, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সল্টলেকের সাই ইস্টার্ন সেন্টারে অনুষ্ঠিত ৭১-তম রাজ্য অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সৌরভ ‘অনূর্ধ্ব ১৮’ দীর্ঘ লম্ফনে (লং জাম্পে) সোনা এবং মেডলে রিলে রেসে ব্রোঞ্জ জয় করে। স্বদেশ ওই প্রতিযোগিতাতেই ‘অনূর্ধ্ব ২০’ ৩০০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করে সোনা জয় করে। অপরদিকে, ২০২২ সালেও সল্টলেকের সাই কমপ্লেক্সে আয়োজিত ৭০-তম রাজ্য অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে (70th State Athletics Championship) সোনা জয় করে স্বদেশ। একাদশ শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় স্বদেশ ‘অনূর্ধ্ব ১৮’ বিভাগের ১৫০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় সোনা জয় করে (মাত্র ৪ মিনিট ২৩.৭ সেকেন্ডে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে)। অসুস্থতার জন্য সেবার অংশ নিতে পারেনি সৌরভ।
উল্লেখ্য যে, স্বদেশ ও সৌরভ দু’জনই মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে বিড়লামাঠের VTFCCE ক্যাম্পে ক্রীড়া প্রশিক্ষক ড. স্বদেশ রঞ্জন পানে’র অধীনে প্রশিক্ষণ নেয়। দুই বন্ধু এবার উচ্চ মাধ্যমিকেও ভালো ফলাফল করে গর্বিত করেছে স্কুল, ক্রীড়া সংস্থা তথা সমগ্র জেলাকে। সৌরভ বলে, “গৃহ শিক্ষক ছিলোনা। একটি কোচিং সেন্টারে পড়েছি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।” স্বদেশ-ও জানায়, স্কুল এবং নিজের চেষ্টাতেই সাফল্য এসেছে। কৃষক পরিবারের এই দুই মেধাবী ও কৃতি সন্তান খেলাধুলার পাশাপাশি কলেজ স্তরের পড়াশোনাতেও সাফল্য অর্জন করতে চায়। দু’জনই তাদের প্রশিক্ষক ড. স্বদেশ রঞ্জন পানে’র মতো ক্রীড়া বিষয়ের শিক্ষক হতে চায়! ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরী বলেন, “ক্রীড় ক্ষেত্রে ওরা শুধু আমাদের স্কুল নয়, সমগ্র জেলাকেই গর্বিত করেছে। অত্যন্ত অনুগত, মনোযোগী এবং কঠোর পরিশ্রমী দুই ছাত্র এবার উচ্চ মাধ্যমিকেও ভালো ফল করে আমাদের স্কুল এবং নিজেদের পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ওদের আরো অনেক সাফল্য কামনা করি।”