দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ মে: দারিদ্র্যে সঙ্গে লড়াই করেই মাধ্যমিকে (২০২২) ৬৫০ নম্বর (প্রায় ৯৩ শতাংশ) পেয়েছিলেন জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী ব্লকের মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের শাশ্বতী ঘোষ। শুধু বিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অঙধিকার করাই নয়, ব্লকেও প্রথম ৫ জনের মধ্যেই ছিলেন একদা মাও-অধ্যুষিত মৌপালের বাসিন্দা শাশ্বতী। বুধবার (৮ মে) প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলেও বিজ্ঞান শাখা থেকে ৮৭ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে শাশ্বতী-ই বিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। শাশ্বতীর প্রাপ্ত নম্বর ৪৩৬ (বেস্ট অফ ফাইভে)। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা এবং জীববিদ্যা-তে শাশ্বতী নম্বর পেয়েছেন যথাক্রমে- ৮৮, ৯২, ৮৪, ৯১, ৬১ এবং ৮১।
উল্লেখ্য যে, শাশ্বতী-র বাবা তারাশঙ্কর ঘোষ পেশায় সামান্য এক গ্রামীণ চিকিৎসক। মা বুলু ঘোষ স্থানীয় একটি নার্সারি স্কুলে নামমাত্র বেতনের বিনিময়ে শিক্ষকতা করেন। তবে, তাঁদের দুই ছেলে-মেয়েই অত্যন্ত মেধাবী এবং কঠোর পরিশ্রমী। শাশ্বতীর দাদা তবব্রত-ও মৌপাল স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন। মাধ্যমিকে ব্লকে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তবব্রত। এখন রসায়ন (Chemistry) বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তবব্রত এবং শাশ্বতী-র পড়াশোনার ক্ষেত্রে স্কুলের ভূমিকা যে অপরিসীম, তা একবাক্যে স্বীকার করেন তাঁদের বাবা-মা থেকে শুরু করে দাদা-বোন দু’জনই। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে শাশ্বতী এখন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু, NEET (মেডিক্যালের প্রবেশিকা) পরীক্ষার প্রস্তুতি সহ কলেজে পড়াশোনার জন্য প্রভূত খরচ। শাশ্বতী-র স্বপ্ন পূরণে তাই বাধা হতে পারে অর্থ! শাশ্বতী বলেন, “অনেক কষ্ট করে বাবা-মা আমার দাদা আর আমাকে পড়াচ্ছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সবসময় পাশে ছিলেন। চিকিৎসক হতে চাই। সেজন্য ভালোভাবে নিট (National Eligibility Cum Entrance Test)-র প্রস্তুতি নেব বলে ভেবেছি।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. প্রসূন কুমার পড়িয়া বলেন, “ভাই-বোন দু’জনই অত্যন্ত মেধাবী এবং মনোযোগী। আর্থিক অনটন উপেক্ষা করেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। শাশ্বতী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং ক্যুইজেও আমাদের বিদ্যাপীঠের হয়ে ব্লক, মহকুমা ও জেলা পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং সাফল্য এনে দিয়েছে। আমরা বিদ্যালয়ের তরফে প্রথম থেকেই যথাসাধ্য সহায়তা করেছি। ভবিষ্যতেও করব।” ড. পড়িয়া এও বলেন, “প্রত্যন্ত এই জঙ্গলমহল থেকে বিজ্ঞান শাখায় ভালো ফলাফল করার জন্য শাশ্বতী পি.সি চন্দ্র জুয়েলার্সের রাধামাধব ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপ পেয়েছে। কিন্তু, তার উচ্চশিক্ষা বা স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে এরকমই আরো কয়েকটি স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়। শুভানুধ্যায়ী এবং সহৃদয় মানুষজন যদি শাশ্বতী’র স্বপ্ন পূরণের পথে হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন, আশা করি ও তাঁদের নিরাশ করবেনা!”