মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ মে: মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় (প্রথম দশে) এবার জায়গা করে নিয়েছে রাজ্যের ৫৭ জন ছাত্র-ছাত্রী। প্রথম দশে আছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৪ কৃতী, যথাক্রমে- কৌস্তভ সাহু (ষষ্ঠ, ৬৮৮); তনুকা পাল (অষ্টম, ৬৮৬), ধৃতিমান পাল (নবম, ৬৮৫) এবং অগ্নিভ পাত্র (দশম, ৬৮৪)। এই চারজনই আবার জেলা শহর মেদিনীপুরেরই বাসিন্দা। শহরের তিনটি স্বনামধন্য স্কুল, যথাক্রমে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল (২ জন); মেদিনীপুর মিশন গার্লস হাই স্কুল এবং রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের (মেদিনীপুর) এই ৪ জন ছাত্র-ছাত্রী জায়গা করে নিয়েছে মেধাতালিকায়। শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান মেদিনীপুরকে ‘গর্বিত’ করতে পেরে খুশি চারজনই। চারজনই জানিয়েছেন, টেক্সট বই বা পাঠ্যপুস্তক খুঁটিয়ে পড়ার কোনও বিকল্প নেই। তবে, চারজনেরই প্রতিটি বিষয়েই গৃহ শিক্ষক ছিলেন। ষষ্ঠ স্থানাধিকারী কৌস্তভ (মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল) ও অষ্টম স্থানাধিকারিনী তনুকা (মিশন গার্লস হাই স্কুল) চায় JEE মেন ও অ্যাডভান্সের প্রস্তুতি নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে। অপরদিকে, গোটা রাজ্যের মধ্যে নবম ও দশম স্থানাধিকারী ধৃতিমান ও অগ্নিভ চায় NEET এর প্রস্তুতি নিয়ে চিকিৎসক হতে।

thebengalpost.net
কৌস্তভ ও ধৃতিমান :

মেধাতালিকায় ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র কৌস্তভ সাহু এবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। যদিও, স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় কৌস্তভ প্রথম হতে পারেনি। প্রথম হয়েছিল বন্ধু ধৃতিমান পাল। মাধ্যমিকে অবশ্য বন্ধুর থেকে ৩ নম্বর কম পেয়ে ধৃতিমান হয়েছে সারা রাজ্যে ‘নবম’। এদিন দুপুরে ধৃতিমান জানায়, “মেধাতালিকায় জায়গা পেয়ে যাব, এটা ভাবতে পারিনি! কারণ, মাধ্যমিকে আমি নিজের সেরাটা দিতে পারিনি। বলতে পারেন, আমি পুরোপুরি স্যাটিসফাইড বা সন্তুষ্ট ছিলাম না!” কেন? “পরীক্ষা আরও ভালো হতে পারত!” হলোনা কেন? ধৃতিমান বলে, “পরীক্ষার দিন কয়েক আগে আমি অতিরিক্ত চাপ নিয়ে ফেলেছিলাম। তাই যেন মনে হচ্ছিল, সব ঠিকঠাক হলোনা!” তা সত্ত্বেও তো ‘নবম’ স্থান অধিকার করেছ? “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! আমার কাছে এটা স্বপ্নের মতো। মেধাতালিকায় জায়গা পাব, ভাবতেই পারিনি। নিজের সেরাটা দিতে পারলে হয়তো আশা করতাম!” ধৃতিমান হতে চায় একজন ভলো চিকিৎসক। অবসর সময়ে গান শুনতে ভালোবাসে শহর মেদিনীপুরের এই মেধাবী ছাত্র। বাবা বুদ্ধদেব পাল গড়বেতার ব্যানার্জিডিঙা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মা অনিতা পাল গৃহবধূ। শহরের কুইকোটা (কালী মন্দিরের কাছে)-তে যৌথ পরিবারে বাস। বাবা-মা চান, “শুধু ভালো চিকিৎসক নয়, ও যেন একজন ভালো মানুষ হয়!”

thebengalpost.net
ধৃতিমান পাল:

অন্যদিকে, মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশনের (রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবন, মেদিনীপুর) ছাত্র অগ্নিভ পাত্র মেধাতালিকার দশম স্থানে আছে। শহরের স্বনামধন্য এই স্কুল থেকে একমাত্র অগ্নিভ-ই এবার প্রথম দশে জায়গা পেয়েছে। টেস্ট পরীক্ষায় অগ্নিভ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল। তবে, মাধ্যমিকে প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষাই খুব ভালো হয়েছিল বলে জানায় অগ্নিভ। ধৃতিমানের মতো সেও জানায়, “চিকিৎসক হতে চাই।” শহরের গোলকুঁয়াচকের বাসিন্দা অগ্নিভ-র বাবা গণেশ চন্দ্র পাত্র শালবনী হাই স্কুলের পদার্থবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক। মা জ্যোৎস্না বেজ পাত্র মেদিনীপুর শহরেরই বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষিকা। অগ্নিভ অবসর সময়ে ক্রিকেট খেলা দেখে। নিজেও ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসে। নানা ধরনের বই পড়তেও ভালোবাসে অগ্নিভ। অগ্নিভ থেকে ধৃতিমান, কৌস্তভ থেকে তনুকা শহর তথা জেলার চার কৃতীই জানায়, “বই পড়ার কোন বিকল্প নেই! বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক বা টেক্সট বই খুঁটিয়ে পড়তে হবে।” এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদার বাসিন্দা সুপম রায়-ও এবার মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তবে, ‘সপ্তম’ (৬৮৭) স্থানাধিকারী সুপম পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা জ্ঞানদীপ বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলের ছাত্র। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের মেধাতালিকায় তাকে পূর্ব মেদিনীপুরের ছাত্র হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে।

thebengalpost.net
বাবা-মা’র সঙ্গে অগ্নিভ: