দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: “থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে….!” বাবা অতি সাধারণ এক মুড়ি বিক্রেতা। তাতে কি! ছেলে স্বপ্ন দেখেছিলেন বিশ্বজয়ের। তবে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা ‘স্বপ্ন’ নয়, বরং ‘স্বপ্ন’ পূরণের তাগিদ তাঁকে এক মুহূর্ত-ও ঘুমোতে দেয়নি! তাই, ‘সোলার উইন্ড কন্ট্রোল অফ ওয়েভ অ্যাকটিভিটি ইন দ্য ম্যাগনেটোস্ফিয়ার’ নিয়ে প্রজেক্ট তৈরী করে, নাসা (NASA/ National Aeronautics and Space Administration)-তে গবেষণার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন মেদিনীপুর শহরের পালবাড়ির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ওঝা। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বছর দুয়েক আগে আবেদন-ও জানিয়েছিলেন। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বিশ্বজিতের! বাবা বিষ্ণুপদ ওঝা পেশায় মুড়ি বিক্রেতা। আর তাঁর ছেলেই গবেষণার জন্য ডাক পেয়েছেন নাসা (NASA) থেকে। যা আপামর মেদিনীপুর শহর তথা পশ্চিম মেদিনীপুর বাসীকে গর্বিত করল!
মেদিনীপুর শহরের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের প্রাক্তনী বিশ্বজিৎ। পরবর্তী সময়ে, পদার্থবিদ্যা (Physics) নিয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) অধীন খড়্গপুর কলেজ (Kharagpur College) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে, শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী (Visva-Bharati) থেকে স্নাতকোত্তর (মাস্টার ডিগ্রি) করেছেন। তারপর, মুম্বাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ জিওম্যাগনেটিসম (IIG)- তে তরঙ্গ বা ওয়েভ (Wave) নিয়ে গবেষণা। রবিবার বেঙ্গল পোস্ট-কে বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, “তাঁর গবেষণার বিষয় হল তরঙ্গ। পৃথিবীর বাইরে প্রায় ৬ হাজার কিমি দূরে রয়েছে পৃথিবীর রেডিয়েশন বেল্ট। প্রায় ১৮ থেকে ২৪ হাজার কিমি দূরে সৌরজগৎ ও মহাকাশের বিভিন্ন দিক থেকে আসা প্রচুর পরিমাণে হাই এনার্জি পার্টিক্যাল পৃথিবীর দিকে আসতে থাকে। কিন্তু, সেই সব হাই এনার্জি পার্টিক্যাল গুলো বিভিন্ন তরঙ্গ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তরঙ্গ গুলোর কাজই হচ্ছে, হাই এনার্জি পার্টিক্যাল গুলোকে অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া, যাতে সেগুলো পৃথিবী পৃষ্ঠে আসতে না পারে।” বিশ্বজিতের লক্ষ্য হচ্ছে, সেই তরঙ্গ গুলোকে চিহ্নিত বা ডিটেক্ট করা। এর দ্বারা এটা জানা যেতে পারে যে, হাই এনার্জি পার্টিক্যাল গুলো কোথা থেকে আসছে এবং সেগুলিকে তরঙ্গ গুলি ডিটেক্ট করে কিভাবে ও কোন দিকে যেতে বাধ্য করছে।
বিশ্বজিৎ বলেন, তাঁর এই গবেষণা সফল হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন হাই এনার্জি পার্টিক্যাল গুলোকে পৃথিবীর দিকে আসা থেকে আটকানো যাবে। ঠিক তেমনই পৃথিবীর চারপাশে যে হাজার হাজার স্যাটেলাইট ঘুরছে, সেগুলোর ক্ষতি হওয়াও আটকানো যাবে। ইতিমধ্যেই, নাসার মহাকাশ বিজ্ঞানী ডেভিড সাইব্যাকের সঙ্গে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেদিনীপুরের বিশ্বজিৎ। পাশাপাশি বিশ্বজিৎ চান, “গোটা বিশ্বে মেদিনীপুরের নাম উঠে আসুক।” বিশ্বজিতের বাবা বিষ্ণুপদ ওঝা বলেন, ছেলের এই কাজে তিনি গর্বিত। তিনি চান, ছেলে যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তা পূরণ হোক এবং দেশ তথা বিশ্বের দরবারে নিজের এবং মেদিনীপুরের নাম উজ্জ্বল করুক। আপামর মেদিনীপুর বাসীও চাইছেন, “বিশ্বজিৎ বিশ্বজয় করুন।”