দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৮ মে: উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ ঝুলে আছে প্রায় ৭-৮ বছর ধরে। বৃহস্পতিবারও সেই জট কাটলো না! আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার ফের সকাল সাড়ে দশটায় বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে হবে শুনানি। অন্যদিকে, আগামীকালই (১৯ মে) দুপুর ১টায় প্রাথমিকের ৩২ হাজার (প্রকৃত সংখ্যা ৩০,১৮৫) শিক্ষকের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলারও চূড়ান্ত রায় দান করবেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সু্প্রতিম ভট্টাচার্য।

thebengalpost.net
বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সু্প্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ (ছবি: হাইকোর্টের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রাপ্ত) :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর আপার প্রাইমারি বা উচ্চ প্রাথমিকের একটি ‘মেধাতালিকা’ (মেরিট লিস্ট) সম্পূর্ণভাবে বাতিল করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য। তারপর, ২০২১’র ২১ জুন দ্বিতীয়বার ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু, তালিকায় বেনজির দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয় যোগ্য ও বঞ্চিত কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনের কাছে গিভেন্স জমা দিতে বলেন বঞ্চিতদের। বিচারপতি তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায় বহাল রাখেন। পরবর্তী সময়ে, ধাপে ধাপে প্রায় ১৫ হাজার প্রার্থীর ইন্টারভিউ হয়। এর মধ্যে, প্রায় দেড় হাজার প্রার্থীকে ইন্টারভিউর পর (বা, ভেরিফিকেশন ও ইন্টারভিউর সময়ে) নানা অসঙ্গতির কারণে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু, তারপরেও প্রায় দু’ বছর হয়ে গেল স্কুল সার্ভিস কমিশন সঠিক ও স্বচ্ছ ভাবে মেরিট লিস্ট প্রকাশ করতে ব্যর্থ! পদে পদে হোঁচট খেতে হয়েছে আদালতে। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের শুনানিতে মামলাকারীদের অভিযোগ, “১৩,৩৩৯ জনের তালিকাতেও একাধিক অসঙ্গতি আছে। ওই ১৩ হাজার প্রার্থীর অরিজিনাল অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ওয়েবসাইটে সবার জন্য প্রকাশ (ওপেন টু অল) করতে হবে। সর্বোপরি, স্কুল সার্ভিস কমিশনের রিক্রুটমেন্ট রুলস অনুযায়ী ইন্টারভিউ’র ১৫ দিন আগের অবধি সমস্ত শূন্যপদ যোগ করে বা আপডেট করে পুনরায় ইন্টারভিউ লিস্ট প্রকাশ করতে হবে।” বঞ্চিতদের তরফে বৃহস্পতিবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সু্প্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে এই বিষয়ে জোর সওয়াল করেন আইনজীবী সুবীর সান্যাল। দুই বিচারপতি আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় ফের সব পক্ষের বক্তব্য শুনবেন বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, প্রাথমিকের ৩০,১৮৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার ভাগ্য নির্ধারণ হবে আগামীকাল (১৯ মে)। শুক্রবার দুপুর ১-টায় রায় ঘোষণা করবেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার প্রায় ৪ ঘন্টার মারকাটারি শুনানি হয়েছে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সু্প্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। বিকেল ৩-টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ অবধি হয়েছে শুনানি। পর্ষদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী লক্ষী গুপ্ত দাবি করেছেন, “সবকিছুই নিয়ম মেনে হয়েছে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। তাই, এত বছর পর মামলাকারীদের কোন দাবিই গ্রাহ্য করা উচিত নয়।” প্রায় একইসুরে ৩০ হাজার (কম-বেশি) শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আইনজীবী জয়দীপ কর দাবি করেছেন, “অ্যাপটিটিউড টেস্টের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা হয় না। ইন্টারভিউর মাধ্যমেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তৎপরতা বোঝা যায়।” তিনি এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক জাজমেন্ট তুলে ধরেন। তাঁর আরও দাবি, “বিচারপতি (অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) অনেক আগেই এই মামলার শুনানিতে জানিয়েছিলেন, ‘ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব!’ উনি সেটাই করেছেন।”

thebengalpost.net
বুধবার বিকেলে শুনানি চলাকালীন:

আইনজীবী কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় তাঁর নিজের মতো করে, দীর্ঘক্ষণ সওয়াল করেছেন এবং সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেছেন। তবে, মূলত তিনি যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন, তা হল- “২০১৯ সালের পর সারা দেশের কোথাও আর অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। তাই, আনট্রেন্ড (অপ্রশিক্ষিত) মামলাকারীরা ট্রেন্ড (প্রশিক্ষিত) এবং যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি তুলতে পারেন না!” তিনি এও বলেন, “শিক্ষক শিক্ষিকারা ৬-৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাঁদের সংসার হয়ে গেছে। কারুর ১টি, আবার কারুর ২টি সন্তান হয়ে গেছে। একেকজনের সঙ্গে পরিবারের অন্তত ৫ জনের ভবিষ্যৎ জড়িত। তাই, তাঁদের চাকরি বাতিল হলে তার প্রভাব পড়বে অন্তত রাজ্যের ২ লক্ষ মানুষের ওপর।” যদিও, এই সমস্ত দাবির সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের আইনজীবী কুমারজ্যোতি তেওয়ারি বলেন, “কম নম্বর পেয়েও এত বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। আর, বেশি নম্বর পেয়েও বঞ্চিতরা রাস্তায় বসে আছেন। সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি। নিয়োগের কোন নীতিই মানা হয়নি। আর, সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি (অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) ‘নিয়োগের সময়’ এর কথা উল্লেখ করেই রায় দান করেছেন। সেই সময় ৩২ হাজার (সঠিক সংখ্যা ৩০,১৮৫) চাকরিপ্রার্থীই অপ্রশিক্ষিত ছিলেন। তাই, প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত নয়। বরং, নিয়ম না মেনে নিয়োগ করার জন্য, ত্রিপুরার মত এ রাজ্যেও এই প্যানেল সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিত।” বিচারপতি তালুকদার জানিয়ে দেন, “আমরা সব পক্ষের কথা শুনেছি। শুক্রবার দুপুর ১টায় রায় ঘোষণা করব।”