দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২১ মে:”মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পাওয়ার পর এস এস সি-কে সবদিক দিয়ে স্বচ্ছ করার চেষ্টা করেছিলাম। পরীক্ষার্থীদের OMR (উত্তর পত্রের) সিটের নকল কপি দেওয়ার জন্য, আমেরিকা থেকে কার্বনহীন পেপার আনিয়েছিলাম (12 th RLST)। শাসকদলের বিভিন্ন মহল থেকে চাপ এলেও, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-ও কোনো চাপ বা সুপারিশ দেননি! তারপরই, তাঁকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-কে। আজ বলতে দ্বিধা নেই, তিনি দায়িত্বে আসার পর থেকেই আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন! চাননি SSC-তে স্বচ্ছতা থাকুক। তাঁর দুর্ব্যবহারের কারণেই আমি ‘কারণ বিহীন’ পদত্যাগ করেছিলাম।” শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলের বিতর্ক সভায় যোগ দিয়ে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলের প্রথম স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মন্ডল। হ্যাঁ, তিনি পদত্যাগ করার পরই এসএসসি থেকে প্রাইমারি রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে! কোথাও আর ওএমআর শিট (OMR Sheet) এর নকল বা জেরক্স দেওয়া হয় না। এখন আর নম্বরসহ মেধা তালিকাও প্রকাশিত হয় না। দুর্নীতির কিছুটা অনুমান করেই হয়তো তৃতীয় তৃণমূল সরকারের আমলে তাঁকে আর শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্রাত্য বসু-কে। তাই, বর্তমান শাসক দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ-ও, তাঁকে সমর্থন করে একটি কথাও বলেননি! তৃণমূল সূত্রে খবর, কুনালের পক্ষে আছেন স্বয়ং দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। তবে, ততদিনে হাজার হাজার যোগ্য পরীক্ষার্থীর জীবন শেষ! অবশেষে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নামক কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতির দৃপ্ত পদক্ষেপে সেই পার্থ বাবু’র তৈরি দুর্নীতির ‘ঘুঘুর বাসা’ ভেঙে চুরমার হতে চলেছে! তাঁর গ্রেপ্তার হওয়া যে এখন সময়ের অপেক্ষা, তা মানছেন আইনজীবী থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দল- সব মহলই।
ইতিমধ্যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় গঠিত এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহা-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০(বি), ৪১৭, ৪৬৫ এবং ৩৪ নম্বর ধারায় মামলা করা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, জামিন-অযোগ্য ৪৬৮ নম্বর ধারাতেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি, সিবিআই যে এফআইআর করেছে, সেখানে শান্তিপ্রসাদ ছাড়াও নাম রয়েছে এসএসসির তৎকালীন প্রোগ্রামার সমরজিৎ আচার্য, তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৌমিত্র সরকার, তৎকালীন সচিব অশোক কুমার সাহা এবং তৎকালীন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের। ফলে, তাঁরা গ্রেফতার হলেই যে “কান টানলে মাথা আসবে” অর্থাৎ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘সুপারিশ’ সামনে আসবে তা বলাই বাহুল্য! ফলে, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী সকলেই হয়তো গ্রেফতার হতে চলেছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে। এমনটাই জানাচ্ছেন আইনজীবী মহল। “এত সহজে কেউ পার পাবেন না” জানিয়েছেন আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জি থেকে সুদীপ্ত দাশগুপ্ত-রা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা!” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিআইএমের সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ আবার জানিয়েছেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো গ্রেফতার হবেন-ই। তবে, যাঁর অনুপ্রেরণা ছাড়া একটা শৌচাগার পর্যন্ত উদ্বোধন হয়না, তাঁর অনুমোদন ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী দুর্নীতি করবেন, এটা অসম্ভব! তাই তাঁর গ্রেপ্তার হওয়াও জরুরি।”