দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ মার্চ: “আমার ভাই (খোকন মাহাত) কখনোই ১২ পেতে পারেনা! আমি SSC-কে চ্যালেঞ্জ করছি নিজেদের প্রশ্নপত্র, অ্যানসার কি আর ওর অরিজিনাল উত্তরপত্র (OMR) বের করে, প্রমাণ করে দেখাক ও (মন্ত্রীর ভাই খোকন মাহাত) ১২ পেয়েছে। আমি তো বলছি, আমার ভাই যদি সত্যি সত্যিই ১২ পায়; আমি মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেব। ছেড়ে দেব আমি মন্ত্রীত্ব!” ঠিক এভাবেই শনিবার সকালে মেদিনীপুর শহরে জেলা তৃণমূলের কার্যালয় থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন শালবনীর বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী (উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের) শ্রীকান্ত মাহাত। তাঁর সংযোজন, “আমার ভাই পরীক্ষা দিয়ে আসার পরই (২০১৭ সালের মার্চ মাসে) উত্তর মিলিয়ে দেখেছিল। ও কখনোই ১২ পেতে পারেনা! SSC’র এই তালিকা ম্যানিপুলেট (কারচুপি) করা। আমি তালিকায় থাকা প্রত্যেকের OMR শিট ফরেনসিক পরীক্ষা করার জন্য আবেদন জানাবো। মিলিতভাবে আগেই মামলা করা হয়েছে। আমরা এককভাবেও মামলা করব। প্রয়োজনে ডিভিশন বেঞ্চ, সুপ্রিম কোর্টে যাব।”

thebengalpost.net
সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ (২০২৩), শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় SSC গ্রুপ-সি পরীক্ষায় ওএমআর (OMR) কারচুপি করে চাকরি পাওয়া ৮৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। এরপরই, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত’র ভাই তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ভীমপুর সংলগ্ন কয়মার বাসিন্দা খোকন মাহাত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইঝি (মামা বাড়ির সম্পর্কে), বীরভূম জেলার বৃষ্টি মুখার্জি সহ ৮৪২ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বাতিল করা হয় তাঁদের চাকরি। দু’এক দিনের মধ্যে তাঁদের ওএমআর (OMR) গুলিও স্কুল সার্ভিস কমিশন নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। সেখানেই দেখা যায়, মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতর ভাই পেয়েছিলেন ১২। তা বাড়িয়ে ৫৫ করা হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের সার্ভারে। ফলে ‘কারচুপি’ করে চাকরি দেওয়ার অভিযোগে উত্তাল হয় গোটা রাজ্য! ঘটনার প্রায় ১ সপ্তাহ পরে অবশেষে মুখ খুললেন মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত। সব দায় চাপালেন এসএসসি’র উপর। তাঁর প্রশ্ন, “পরীক্ষার (পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৭ সালে, নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে) পাঁচ বছর পর নম্বর জানাল এসএসসি। নিজেদের দোষ ঢাকতে, আদালতের চাপে যা হোক একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আমি বলছি, এই তালিকা সঠিক নয়।” তাঁর অভিযোগ, এই ঘটনায় তাঁকে অপমানিত হতে হয়েছে। দলেরই একটি অংশের তরফে অপপ্রচার করা হয়েছে! এদিন তাই সাংবাদিক বৈঠক করে এসএসসির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছেন, “আমার ভাই প্রাইমারি টেট (TET) থেকে শুরু করে সেট (SET) পরীক্ষায় পাস করেছে। সামান্য কয়েক নম্বরের জন্য নেট পরীক্ষায় এখনও পাস করতে পারেনি। তবে, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ও কোনোমতেই ১২ পেতে পারেনা! আমি এসএসসি-কে চ্যালেঞ্জ করছি। ওর অরিজিনাল উত্তরপত্র, অ্যানসার কি আর প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরা তো মামলা করবোই। প্রয়োজনে ডিভিশন বেঞ্চ, সুপ্রিম কোর্টে যাব। আর, এসএসসি যদি প্রমাণ করে দিতে পারে ও সত্যি সত্যিই ১২ পেয়েছে, আমি মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেব। আর, তা যদি না হয়; যারা অপপ্রচার করছিল আমার বিরুদ্ধে, তাদেরও দল ছাড়তে হবে।” এদিকে, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হয়ে রাজ্য সরকারের (স্কুল শিক্ষা দপ্তরের) অধীন সংস্থার বিরুদ্ধেই এদিন যেভাবে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন ‘জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্র’ শ্রীকান্ত মাহাত, তাতে বিরোধীরা ফের একবার ‘বেনজির দুর্নীতি’ এবং ‘নজিরবিহীন ঘটনা’র অভিযোগ তুলে শাসকদল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন।