দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৫ অক্টোবর: ইডি (Enforcement Directorate) হেফাজতে অপসারিত পর্ষদ সভাপতি তথা ‘মেধাতত্ত্বের জনক’ মানিক ভট্টাচার্য। তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক বিস্ফোরক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রমাণ! সম্প্রতি, ইডি’র হাতে এমন তথ্যও এসেছে, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের চাকরি দিতে রীতিমতো সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৫৫০টি বেসরকারি ট্রেনিং (বি.এড ও ডি.এল.এড) কলেজ থেকে আলাদা করে নাকি পরীক্ষা নেওয়ার বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া না হলেও, ওই সমস্ত অযোগ্য প্রার্থীদের হাতে ঘুরপথে শংসাপত্র পৌঁছে গেছে বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। ওই সময় শংসাপত্র পাওয়া একাধিক অযোগ্য প্রার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের দাবি, অতি সুকৌশলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ-এর প্রাক্তন সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মিডলম্যানরা হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মাথা পিছু প্রায় দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে ওই শংসাপত্র দেন। মানিক এখন ইডি-র হেফাজতে রয়েছেন। ইডি সূত্রের দাবি, মানিককে জেরা করেই এই তথ্য তাদের হাতে এসেছে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, কারচুপির মাধ্যমে নিজের দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন মানিক। আলাদা করে পরীক্ষা দিয়ে কয়েক হাজার অযোগ্য প্রার্থী যাতে বেসরকারি বি.এড (B.Ed) ও ডি.এল.এড (D.El.Ed) কলেজগুলি থেকে ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট পান, তার ব্যবস্থা করেছিলেন। কারণ, এই ট্রেনিং (বি.এড ও ডি.এল.এড) ছাড়া এবার প্রাথমিকে (২০২০-‘২১ এর নিয়োগ প্রক্রিয়ায়) নিয়োগ করা হয়নি।

thebengalpost.net
Manik Bhattacharya (File Photo):

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মানিক-ঘনিষ্ঠ তথা ‘অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি তাপস মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের ওই শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছিল। আর, তার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মানিক। এ ভাবে অযোগ্য প্রার্থীদের ট্রেনিং (বি.এড ও ডি.এল.এড) শংসাপত্র বিক্রি করে মানিক-ঘনিষ্ঠদের বেসরকারি বি.এড কলেজগুলির মাধ্যমে প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি তোলা হয়েছে বলে ইডি-র প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। ইডি-র দাবি, বিভিন্ন মহলের সুপারিশ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ শূন্য পদের (বাস্তবে নিয়োগ হয়েছে ১৩ হাজারের কাছাকাছি) মধ্যে অন্তত দেড় হাজার (১৫০০) অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়। তাঁদের ট্রেনিং সম্পূর্ণ করা পড়ুয়া হিসেবে দেখানো হয়। তাতে সরকারি সিলমোহর বসানোর জন্যই ২০১৭-১৯ এবং ২০১৮-২০ পুরাতন বর্ষের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বেসরকারি কলেজগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে পুরনো বর্ষের পরীক্ষাকে ‘সাপ্লিমেন্টারি এগজ়ামিনেশন’ বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। ফলে, সাদা খাতা জমা দেওয়া, টেট ফেল পরীক্ষার্থী ছাড়াও ট্রেনিং বিহীন পরীক্ষার্থীদের নিয়োগ করার কেলেঙ্কারিও উঠে আসছে তদন্ত প্রক্রিয়ায়। আর, ১৬ হাজার ৫০০ নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই এভাবে ঘুরপথে প্রায় তিন-সাড়ে তিন হাজার জনকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে এখনও অবধি সূত্রের খবর। এর সঙ্গে, ২০১৬-‘১৭’র ৪২ হাজার নিয়োগ প্রক্রিয়া ধরলে সংখ্যাটা যে অনায়াসে ১০ হাজারের কাছাকাছি বা আরও বেশি হবে তা একপ্রকার নিশ্চিত!

thebengalpost.net
Advertisement: