Recruitment

SSC Scam: ‘ভুয়ো’ শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ SSC’র! CBI নজরে শুধু মেদিনীপুরেরই ২০১ শিক্ষক, তড়িঘড়ি তথ্য পাঠাল বিদ্যালয়গুলি

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম, ২ ডিসেম্বর: বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশে নবম-দশমের ১৮৩ জন ‘ভুয়ো’ বা ‘অবৈধ’ শিক্ষকের তালিকা স্কুল সার্ভিস কমিশন নিজেদের ওয়েবসাইটে (www.westbengalssc.com) প্রকাশ করলো অবশেষে। যদিও, আদালতের নির্দেশে অক্টোবর মাসেই এই ধরনের শিক্ষকদের চিহ্নিত করেছিল এসএসসি। এমনকি, তাঁদের মধ্যে ২০ জনকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ বরখাস্তও করেছিল SSC। বাকি ১৬৩ জনের মধ্যে কয়কেজন অবশ্য স্কুলে যোগদানই করতে পারেননি! তালিকায় থাকা পশ্চিম মেদিনীপুরের ৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। তাঁদের (সম্মানের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হলোনা) হাতে ‘নিয়োগপত্র’ ধরিয়ে যথাক্রমে- খুটিয়াগোকুলপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ, কুলিয়া অবিনাশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, সড়ং মধুসূদন বিদ্যাপীঠে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হলেও, তাঁরা যোগদান করতে পারেননি বলেই জানা যায়। গত ১৩ অক্টোবর (২০২২) একমাত্র বেঙ্গল পোস্ট ডিজিটালেই সেই খবর বিশদে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে, যোগদান না করা শিক্ষকদের সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে নগন্য! তালিকায় থাকা বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাই ২০১৮-‘১৯ সাল থেকে চাকরি করছিলেন। তবে, ‘দুর্নীতি’র আশ্রয় নিয়েই যে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁদের নিয়োগ করার ব্যবস্থা করেছিলেন তৎকালীন শান্তি প্রসাদ সিনহা, অশোক কুমার সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়রা; তা বলাই বাহুল্য।

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই-কমিশন সওয়াল-জবাবের পর এই ১৮৩ জনের নামের তালিকা ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, নির্দেশ পাওয়ার মাত্র ৩-৪ ঘন্টার মধ্যেই এসএসসি সেই তালিকা প্রকাশ করে নিজেদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। কারণ, ১৮৩ জনের তালিকা প্রস্তুত করাই ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৮৩ জন ‘অবৈধ’ বা ‘ভুয়ো’ বা ‘বাতিল’ শিক্ষকের মধ্যে সর্বাধিক ৩৭ জনই হল মুর্শিদাবাদ জেলার শিক্ষক-শিক্ষিকা। এছাড়াও, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ২৯ জন এবং মালদা জেলার ২৫ জন আছেন এই তালিকায়। অপরদিকে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১০ জন এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মাত্র ৩ জন আছেন এই ১৮৩ জনের তালিকায়। তালিকায় থাকা পশ্চিম মেদিনীপুরের এক শিক্ষকের সঙ্গে বেঙ্গল পোস্টের তরফে যোগাযোগ করা হলে অক্টোবর মাসেই (১৩ অক্টোবর) তিনি জানিয়েছিলেন, লকডাউনের সময়কালে তাঁর হাতে নিয়োগপত্র এসে পৌঁছেছিল। তবে, তিনি জয়েন (যোগদান) করতে পারেননি! নির্ধারিত স্কুলের তরফে ‘যথাযথ’ কারণ দেখিয়ে সেই সময় তাঁকে যোগদান করানো হয়নি। পরবর্তী সময়েও পশ্চিম মেদিনীপুরের এই তিন ‘শিক্ষক-শিক্ষিকা’ (বা, চাকরিপ্রার্থী) যোগদান করতে পারেননি!

অন্যদিকে, সিবিআই (CBI) এর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দাবি করা হয়েছে এবং আদালতে হলফনামা আকারে জমা দেওয়া হয়েছে যে, নবম-দশমে ‘অবৈধভাবে’ বা ‘কারচুপি করে’ চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যাটা অন্তত ৯৫২ এবং একাদশ-দ্বাদশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা অন্তত ৯০৭। এঁদের ওএমআর (OMR) পরীক্ষা করে সিবিআই নম্বরের ‘কারচুপি’ ধরে ফেলেছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে সিবিআই-এর পক্ষ থেকে বেশ কিছু এমন ওএমআর জমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে নম্বর ‘৩’ থেকে বাড়ি ‘৫৩’ করা হয়েছে! এমনকি, ব্ল্যাঙ্ক বা ফাঁকা ওএমআরে চাকরি পাওয়ার নজিরও আছে বলে জানা যায়। এই ধরনের চাকরিপ্রার্থীদের চিহ্নিত করে সিবিআই ইতিমধ্যে তালিকা আদালতের কাছে জমা দিয়েছে। আদালতের নির্দেশে (WPA 5538/2022 এবং WPA 5406/2022) এবার সেই শিক্ষকদেরই তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করল এস এস সি। ইতিমধ্যে, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার ২০১ জন (ঝাড়গ্রামের মাত্র কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগই অবশ্য পশ্চিম মেদিনীপুরের) শিক্ষক-শিক্ষিকার তালিকা ঘুরে বেড়াচ্ছে সমাজমাধ্যমে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে তালিকা আসলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে পাঠানো হয়েছে জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক বা ডি.আই (DI)- এর কাছে। ডিআই-এর তরফে তা সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের কাছে পাঠিয়ে, ওই শিক্ষকদের (২০১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা) বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট ফরমাটে। বিদ্যালয়গুলোতে বুধবার তা পাঠানো হয়েছিল এবং বৃহস্পতিবার বিকেল ৪-টার মধ্যেই জমা দিতে বলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) চাপেশ্বর সর্দার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, “স্কুল সার্ভিস কমিশন এই সকল শিক্ষকদের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪-টার মধ্যে প্রধান শিক্ষকরা তা পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরা শুক্রবার কমিশনে পাঠিয়ে দেব।” তবে, এর বেশি তাঁর কিছু জানা নেই বলেই জানিয়েছেন।

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশ: (সূত্র মারফত পাওয়া)

মূলত, শিক্ষকদের নাম, রোল নম্বর (২০১৬ SLST’র), বিষয়, স্কুলের নাম, স্কুলে যোগদান করেছেন কিনা এবং এখনও স্কুলে আসছেন কিনা বা বেতন পাচ্ছেন কিনা- এই ৬-টি তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নামকরা একাধিক স্কুলে এই ধরনের তালিকা পৌঁছে যাওয়ায় জেলাজুড়ে সোরগোল পড়ে গেছে! জেলার মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ডেবরা, সবং, ঘাটাল, গড়বেতা, বেলদা, দাঁতন, কেশিয়াড়ি প্রায় সমস্ত ব্লকের এক বা একাধিক স্কুল এই তালিকায় আছে। বিখ্যাত কয়েকটি স্কুল হল (শিক্ষকদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে)- বেলদা গঙ্গাধর একাডেমি, জলচক নাটেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়, নছিপুর আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়, রাধামোহনপুর বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়, খড়্গপুর সিলভার জুবলি উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাটাল গুরুদাস উচ্চ বিদ্যালয়, আলোককেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাড় ব্রহ্মময়ী, মেদিনীপুর টাউন স্কুল, চিড়িমারসাই শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউ উচ্চ বিদ্যালয়, গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয় প্রভৃতি। উল্লেখ্য যে, এর মধ্যে বেশকিছু স্কুলে বিভিন্ন বিষয়ের একাধিক শিক্ষক তালিকায় আছেন। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, গজাশিমুল কে.সি.এম প্রভৃতি হাতেগোনা কয়েকটি স্কুল এই তালিকায় আছে। সবমিলিয়ে এই দুই জেলার নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের সন্দেহভাজন শিক্ষকদের তালিকাটা ২০১! এর মধ্যে, একাদশ-দ্বাদশের বিভিন্ন বিষয় মিলিয়ে সংখ্যাটা ১০৬। বাকিরা নবম-দশমের। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দুর্নীতির দায়ে বা ঘুরপথে চাকরি পাওয়ার কারণে, এঁদের প্রায় সকলেরই হয়তো চাকির চলে যেতে পারে! বলাই বাহুল্য, ২০১ জনের মধ্যে ৩ জনের চাকরি ইতিমধ্যে ‘বাতিল’ করা হয়েছে SSC’র তরফে। SSC’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নবম-দশমের ‘বাতিল’ ১৮৩ জনের তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে মাত্র এই ৩ জনই (২ জন ইংরেজি, ১ জন ফিজিক্যাল সায়েন্স) আছেন। সুতরাং, পরের ধাপে হয়তো অবশিষ্ট ১৯৮ জন বা আরো বেশি শিক্ষকের চাকরি যেতে চলেছে! অন্যদিকে, পূর্ব মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগণা সহ প্রতিটি জেলা থেকেই এই ধরনের শিক্ষকদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। আগামী ১৪ ডিসেম্বরের এই ধরনের শিক্ষকদের বিস্তারিত তালিকা কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিতে চলেছে সিবিআই এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাই বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) কমিশনের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন, “আপনারা সাহসী হোন। এবার অনেক ধেড়ে ইঁদুর ধরা পড়বে।”

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ:

News Desk

Recent Posts

Snake Lover: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন; পোষা কেউটের দংশনেই প্রাণ হারালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘সর্পবন্ধু’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…

1 day ago

Medinipur: খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাফিলতিতে মাতৃগর্ভেই শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…

1 day ago

Midnapore: কথা দিয়ে কথা রাখেনি; পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষকের করা মামলায় বহুজাতিক সংস্থাকে জরিমানা করল জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…

3 days ago

Medinipur: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ি; হঠাৎই বেরিয়ে এল প্রাচীন সুড়ঙ্গ! চাঞ্চল্য পশ্চিম মেদিনীপুরে

শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…

3 days ago

Midnapore: সিরিঞ্জ থেকে জীবনদায়ী ওষুধের সং*কট মেদিনীপুর মেডিক্যালে! চিঠি লিখলেন জুনিয়র ডাক্তাররা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…

3 days ago

Midnapore: ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কারে ভূষিত হলেন বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…

4 days ago