দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৩ মে:নজিরবিহীন দুর্নীতি’র চিত্র ক্রমেই পরিস্ফুট হচ্ছে। সিবিআই (CBI) তদন্ত এখনও হয়নি, তাতেই গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি নিয়োগে প্রায় এক হাজার জন প্রার্থী’র ভুয়ো নিয়োগের রিপোর্ট উঠে এল! স্কুল সার্ভিস কমিশনের ডিভিশন বেঞ্চ তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে। সেই বাগ কমিটি-ই শুক্রবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দ কুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এসএসসি গ্রুপ- সি নিয়োগে হওয়া বেনজির দুর্নীতি’র পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তুলে দিয়েছেন। জানানো হয়েছে, ৩৮১ জনের ভুয়ো বা মেয়াদোত্তীর্ণ নিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে, ২২২ জন পরীক্ষাতেই বসেনি! বাকিরা ফেল করা ক্যান্ডিডেট! এমনটাই লাগামছাড়া দুর্নীতি করা হয়েছিল ২০১৯ সালের মে মাসে প্যানেলের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও! আর, প্যানেলের মধ্যে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা হয়তো আদলত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেই উঠে আসবে! আগামী ১৮- মে ডিভিশন বেঞ্চ রায়দান করবে গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি নিয়োগে সিবিআই তদন্তের বিষয়ে। উল্লেখ্য যে, মাস খানেক আগেই গ্রুপ- ডি’তে ৬০৯ জনের ভুয়ো নিয়োগের রিপোর্ট দিয়েছিল এই বাগ কমিটি-ই। সবমিলিয়ে আগামী ১৮ মে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ রায়দান করবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এর আগে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ-কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল SSC।

thebengalpost.net
এস. পি সিনহা :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মে) আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে এই নিয়োগ দুর্নীতি-তে জড়িতদের নাম প্রকাশ করেছে বাগ কমিটি। এঁরা হলেন, যথাক্রমে-
১) সমরজিৎ আচার্য (স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রোগ্রামিং অফিসার) ২) কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় (মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি) ৩) সৌমিত্র সরকার (স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান) ৪) অশোককুমার সাহা (স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব) ৫) সুবীরেশ ভট্টাচার্য (স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান) ৬) রাজেশ লায়েক (বোর্ডের টেকনিক্যাল অফিসার) এবং ৭) শর্মিলা মিত্র, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজউদ্দিন, মহুয়া বিশ্বাস, চৈতালি ভট্টাচার্য (কমিশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান)। এঁদের মধ্যে, সৌমিত্র সরকার, অশোক কুমার সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং সমরজিৎ আচার্যের বিরুদ্ধে মামলা (FIR) করা যেতে পারে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, চৈতালি ভট্টাচার্য, শর্মিলা মিত্র, মহুয়া বিশ্বাস, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং শেখ সিরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। মেয়াদ শেষের পরও ২০১৯ এর নভেম্বর মাস অবধি বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল, নিয়োগ উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক শান্তিপ্রসাদ সিংহের সুপারিশ অনুযায়ী। ভুয়ো নিয়োগপত্র তৈরি করেছিলেন পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। এমনটাই উঠে আসছে তদন্তে। আর, এ সবকিছুই যাঁর প্রত্যক্ষ অঙ্গুলিহেলনে হয়েছে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন, তিনি হলেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়! এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, নবম-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগেও একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। আগামী ১৭ জুন অবধি নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগে ইতিমধ্যে স্থগিতাদেশ জারি করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

thebengalpost.net
বাগ কমিটি-র তদন্ত রিপোর্টে চাপে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় :