Recruitment

SSC Recruitment: রাত পোহালেই SSC দুর্নীতির ঐতিহাসিক রায়! প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর ভাগ্য-নির্ধারণ সকাল সাড়ে ১০টায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২১ এপ্রিল: রাত পোহালেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করতে চলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের (ডিভিশন বেঞ্চের) বিচারপতি দেবাংশু বসাক। কলকাতা হাইকোর্টের ২৯ নং এজলাসে (রুমে) সকাল ঠিক সাড়ে দশটায় SSC (School Service Commission) দুর্নীতির মোট ৩৪৮-টি মামলার (একত্রে) রায়দান করতে চলেছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ সব্বার রশিদির ‘বিশেষ’ ডিভিশন বেঞ্চ (Special Division Bench)। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি (সদ্য প্রাক্তন) অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ (২০২৩-র অক্টোবর মাসে) মেনে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি.এস শিবজ্ঞানম গত নভেম্বর (২০২৩) মাসে এই বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ গড়ে দিয়েছিলেন। SSC-র নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি নিয়োগ-দুর্নীতির প্রায় সাড়ে তিনশো (৩৪৮টি) মামলা একত্রিত করে প্রায় চার মাস ধরে টানা শুনানি হয় বিচারপতি বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে। অবশেষ সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত ছয় মাসের মধ্যেই (৯ মে-র মধ্যে) এক ‘ঐতিহাসিক’ রায় ঘোষণা (২২ এপ্রিল, সোমবার) করতে চলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি যথাক্রমে দেবাংশু বসাক ও মহম্মদ সব্বার রশিদি। এই রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর (সবমিলিয়ে প্রায় ২৩ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ হয় ২৫ হাজারের বেশি) ভাগ্য বা ‘ভবিষ্যৎ’ নির্ধারিত হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীরা।

রায়দান করবেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক (ভিভিশন বেঞ্চ):

উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের (নিয়োগ হয় ২০১৮-‘১৯ সালে) নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শিক্ষক নিয়োগ (1st SLST 2016) এবং শিক্ষাকর্মী (গ্রুপ সি ও ডি) নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১৮ সাল থেকেই আদালতের দরজায় কড়া নাড়া শুরু করেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। ২০২২ সাল পর্যন্ত শতাধিক মামলাতে পিটিশনার বা বিচারপ্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন অন্তত চার-পাঁচ হাজার বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী। ২০২২ সালে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে চাকরি যেতে শুরু করে ‘বিতর্কিত’ বা ‘অবৈধ’ ভাবে নিযুক্ত কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর। জেলে যেতে হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (২০২২’র ২৩ জুলাই), স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গড়ে দেওয়া বিশেষ কমিটির চেয়ারপারসন শান্তি প্রসাদ সিনহা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে একাধিক আধিকারিক এবং মধ্যস্থতাকারীদের (মিডিলম্যান বা দালাল)। অভিযোগ মূলত তিন ধরনের- প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও নিয়োগ, কমিশনের সুপারিশ ছাড়াই বিশেষ কমিটির সুপারিশে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নিয়োগপত্র প্রদান এবং ওএমআর (OMR) কারচুপি করে নিয়োগ। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলা আসার আগেই অবশ্য গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগের দুর্নীতিতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গড়ে দিয়েছিল ‘বাগ কমিটি’। প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বাধীন সেই কমিটি তদন্ত করে জানিয়েছিলেন, প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-তে কয়েকশ চাকরিপ্রার্থীকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এও জানিয়েছিলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন এই নিয়োগে বড়সড় দুর্নীতি করেছে। এরপরই মামলা পৌঁছয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের শিক্ষা সংক্রান্ত মামলার একক বেঞ্চে (সিঙ্গেল বেঞ্চে)। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি ছাড়াও, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক কেলেঙ্কারি ‘খুঁজে’ পান তিনি। বাগ কমিটির রিপোর্ট এবং বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে অবৈধভাবে নিয়োগ হওয়া প্রায় ৩ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীকে খুঁজে বের করে সিদ্ধার্থ মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বর্তমান স্কুল সার্ভিস কমিশন। এরপরই, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক নির্দেশে একদিকে যেমন চাকরি হারাতে শুরু করেন ‘বিতর্কিত’ বা অবৈধ উপায়ে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা; ঠিক তেমনই জেলে যেতে শুরু করে প্রায় গোটা শিক্ষা দপ্তর।

এর মধ্যেই, উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে OMR মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকা সংস্থা নাইসা (NYSA)-র এক প্রাক্তন কর্মী (পঙ্কজ বনশল)-র বাড়ি থেকে একটি হার্ডডিস্ক উদ্ধার করে সিবিআই। তাতে লক্ষ লক্ষ ওএমাআর (OMR) স্ক্যান করে রাখা ছিল বলে সিবিআই এর দাবি। এই সমস্ত OMR এর নম্বর SSC-র সার্ভারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর নম্বরের মিস ম্যাচ বা অমিল! বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রকাশ্যে আসে ব্ল্যাঙ্ক বা ফাঁকা ওএমাআর! ‘অতিরিক্ত’ বা প্যানেল বহির্ভূত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সাথে সাথেই তাঁদের চাকরিও ‘বাতিল’ করেন তিনি (প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) এবং পরবর্তী সময়ে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। ডিভিশন বেঞ্চ (সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ)-ও চাকরি বাতিলের নির্দেশের স্থগিতাদেশ দেয়নি। তবে, পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মামলায় পার্টি করতে বলা হয়। একই সঙ্গে ডিজিটাল (বা ইলেকট্রনিক্স) তথ্যের (হার্ডডিস্ক বা পেন ড্রাইভ) ‘সত্যতা’ যাচাই করতে নির্দেশ দেওয়া হয় আইন (65-B ধারা অনুযায়ী) মেনে। প্রায় ৫-৬ মাস শুনানির পর এই সমস্ত নির্দেশ দিয়ে মামলা ফেরত পাঠানো হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গড়ে দেন বিশেষ ভিভিশন বেঞ্চ। সেই বেঞ্চেই শুনানি হয়। স্কুল সার্ভিস কমিশন স্বীকার করে প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর এবং তাদের সুপারিশ ছাড়াই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগ করেছে। তবে, ডিজিটাল OMR বা এএমআরের স্ক্যান কপি-র প্রসঙ্গটি তারা আদালতের উপরই ছেড়ে দেয়। কারণ, আসল বা অরিজিনাল OMR নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে আগেই! ওএমআর কারচুপির অভিযোগ ওঠা কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আইনজীবীরা বলেন, “65-B তে কোনোকিছুই প্রমাণ করতে সিবিআই।” তাদের অভিযোগের তীর স্কুল সার্ভিস কমিশনের দিকেই! বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “দুর্নীতি করে বা অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া প্রত্যেকের চাকরি যাওয়া উচিত। ওই ওএমআর যে বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের নয়, তাও তাঁরা প্রমাণ করতে পারেননি!” শেষ শুনানিতে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য ছিল, “আমি ২৩ লক্ষ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের কথাও ভাবছি!” তিনি এও বলেন, “প্যানেলের বহির্ভূত বা অতিরিক্ত নিয়োগ সরাসরি বাতিল হওয়া উচিৎ! এই নিয়োগ থেকে ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল!” অবশেষে রাত পোহালেই রায় দান…!!!

SSC-র একটি হলফনামার কিছু অংশ, আইনজীবীদের মাধ্যমে পাওয়া (সংগৃহীত):

News Desk

Recent Posts

Snake Lover: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন; পোষা কেউটের দংশনেই প্রাণ হারালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘সর্পবন্ধু’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…

14 hours ago

Medinipur: খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাফিলতিতে মাতৃগর্ভেই শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…

16 hours ago

Midnapore: কথা দিয়ে কথা রাখেনি; পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষকের করা মামলায় বহুজাতিক সংস্থাকে জরিমানা করল জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…

2 days ago

Medinipur: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ি; হঠাৎই বেরিয়ে এল প্রাচীন সুড়ঙ্গ! চাঞ্চল্য পশ্চিম মেদিনীপুরে

শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…

2 days ago

Midnapore: সিরিঞ্জ থেকে জীবনদায়ী ওষুধের সং*কট মেদিনীপুর মেডিক্যালে! চিঠি লিখলেন জুনিয়র ডাক্তাররা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…

3 days ago

Midnapore: ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কারে ভূষিত হলেন বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…

3 days ago