দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ ডিসেম্বর: “ঘুষ না দিলে চাকরি হবেনা!” গত কয়েক বছরে এমনই একটা ‘বাক্য’ বোধহয় শহর থেকে গ্রাম বাংলার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়েছিল! তারই ‘বলি’ হতে হচ্ছে তপনের মতো আরও কত মেধাবী সন্তানদের! তীব্র যন্ত্রণা, অসহনীয় চাপ সহ্য করতে না পেরে তপনের মতোই আরও কতজন যে এভাবেই ‘চরম সিদ্ধান্ত’ নিয়ে ফেলেছেন (বা, ফেলছেন) তার ইয়ত্তা নেই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার বুলুরি গ্রামের (সুপা সংলগ্ন এলাকা) নিতান্ত দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের বছর ২৮-এর যুবক তপন দোলই-ও গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাত্রি সাড়ে দশটা-এগারোটা নাগাদ এমনই এক মর্মান্তিক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললেন বাড়ির কাউকে সামান্যতম কিছু বুঝতে না দিয়েই! প্রতিদিনের মতোই রাতের খাবার খেয়ে নিজের ছোট্ট ঘরে (রুমে) শুতে গিয়েছিলেন ইংরেজি নিয়ে অনার্স পড়ার পর বি.এড সম্পন্ন করা তপন। কিন্তু, চাকরি না পাওয়ার হতাশা, আঘাত এবং সর্বোপরি একাধিক লোনের (বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও সংস্থা থেকে নেওয়া লোন বা ঋণের) চাপ সহ্য করতে না পেরেই হয়তো বাড়িতে রাখা কীটনাশক এক নিমেষে পান করে ফেলেছিলেন তপন! তীব্র যন্ত্রণায় যখন ছটফট করতে থাকেন ঘরের মধ্যে, তখনই ছুটে আসেন বাবা-মা এবং দাদা-বৌদিরা। নিয়ে যান নিকটবর্তী গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে গভীর রাতেই মেদিনীপুর শহরের বেসরকারি হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে শুক্রবার রাতে স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তবে, শেষ রক্ষা হলোনা! শনিবার দুপুর দু’টো-আড়াইটা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেধাবী সন্তান তপন দোলই।
শনিবার বিকেলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দাঁড়িয়ে, বুকে তীব্র কষ্ট-যন্ত্রণা চেপে রেখেই বছর ৩৫-এর দাদা সুকুমার দোলই শোনালেন ‘নির্মম সত্য’ গুলি। ঘাটাল কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর কেশপুর সংলগ্ন বগছড়ি এলাকার একটি প্রাইভেট বি.এড কলেজ থেকে নিয়েছিলেন বি.এড ট্রেনিং। তারপরই বসেছিলেন ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় (1st SLST, 2016)। নবম-দশমের শিক্ষক পদপ্রার্থী তপন পরীক্ষাও দিয়েছিলেন মোটামুটি ভালোই। তারপরই আসে সেই ‘প্রস্তাব’! টাকা দিলে চাকরি হয়ে যাবে! সুকুমার শোনালেন, “৫ লক্ষ টাকা অ্যাডভান্স চায় এক দালাল। আমরা জানতামও না। ওই বিভিন্ন জায়গা থেকে লোন-ধার করে, কবে কবে গিয়ে টাকা দিয়ে আসে। সেটা ২০১৭ সালের দিকে হবে। তারপর ২০১৮ সালে লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে দেখা যায় পাস করেছে। তবে, ইন্টারভিউর পর চূড়ান্ত মেধাতালিকা বেরোলে দেখা যায় ওর নাম নেই! ওয়েটিং লিস্টে ছিল। তারপর চার বছর কেটে গেলো। কিন্তু, চাকরি হলোনা!” তিনি যোগ করেন, “এর মাঝেই একদিন (২০২০ সালে) কেশপুর সংলগ্ন বিশ্বনাথপুর এলাকায় একজনের বাড়িতে টাকা ফেরত চাইতে গিয়েছিল। কিন্তু, প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি শুনে চলে আসে। এদিকে, লোনের চাপ বাড়ছিল। এনিয়ে আমাদের ষাটোর্ধ্ব বাবাও খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চাষবাস করে সংসার চলে। ও কিছু টিউশন করত। তবুও, এতগুলো টাকা মেটানো নিয়ে খুব চাপে ছিলাম সবাই! সেটাই হয়তো কাল হলো!” তবে, চোখে জল নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজ্যের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। বললেন, “শিক্ষা ব্যবস্থাটা পুরো ধ্বংস করে দিল!” মেডিক্যাল কলেজের নতুন বিল্ডিংয়ের (আই.সি বিল্ডিং) এক কোণে বসে বসে মাথায় হাত দিয়ে শুধুই কেঁদে চলেছিলেন দিদি বিজলী দোলই। বলছিলেন, “ভাই রে এটা তুই কি করলি? তোর জন্য যে মেয়ে দেখছিলাম, বিয়ে দেব বলে। এটা তুই কি করলি….?”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…