দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ জুলাই: শুধু বাংলা বানান নয়, অঙ্ক কষতেও কালঘাম ছুটছে বাঁকুড়ার ওন্দা থানার চড়ুইকুঁড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত (২০১৪ টেট থেকে ২০২১- এ নিযুক্ত) শিক্ষক রাজীব কুমার দীক্ষিতের! প্রায় এক বছর ধরে এই বিষয় লক্ষ্য করার পর, সোমবার (১১ জুলাই) ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো অভিভাবকদের। স্কুল ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা-মায়েরা। দাবি, অবিলম্বে ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে সরাতে হবে! এই দাবিতে ভেতরে স্কুলের শিক্ষকদের আটকে রেখে, তালা দেওয়া হল। শিক্ষক বলতে প্রবীণ প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার নন্দী আর ওই ‘অযোগ্য’ নবনিযুক্ত শিক্ষক। এরপর স্কুলে পৌঁছন সাংবাদিকরা।‌ সাংবাদিকদের দেখেই ওই শিক্ষকের অবস্থা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’! পাগলের মতো এদিক-ওদিক দৌড়ে বেড়ালেন। বললেন, “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।” তবে, অভিভাবকদের দাবি যে সত্য, তা মেনে নিলেন‌‌ প্রধান শিক্ষক। তিনি বললেন, “ওকে অনেকবার বলেছি, যুক্তাক্ষর গুলো প্র্যাকটিস কর। ইংরেজি একটু আধটু শেখ। অঙ্ক শেখ।” ২০২১ সালে নিযুক্ত বছর ৩৬-এর ওই শিক্ষকের বাংলা-অঙ্ক’ জ্ঞানের দৌড় অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল! এই মুহূর্তে সেই ভিডিও নেট মাধ্যমে ভাইরাল-ও হয়েছে।

thebengalpost.net
সেই প্রাথমিক শিক্ষক:

অভিভাবকরা বোর্ডে লিখে দিলেন, ৭০০২৩ থেকে ১২৯৭৬ বিয়োগ (৭০০২৩-১২৯৭৬)। রাজীব বাবু’র তখন রীতিমতো হাত-পা কাঁপছে! লিখছেন আর মুছছেন। তারপর অবশ্য যথারীতি ভুল করলেন! উত্তর লিখলেন- ৫২৯৪৭। আর, বাংলা বানানে হার মানাবেন ‘আমরেলা গার্ল’কেও। আর, ইংরেজি বইয়ে নাকি ভয়ে হাত দিতেই চাননা! এই ‘অযোগ্য শিক্ষক’ কে নিয়ে মহা ফাঁপরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবক-অভিভাবিকারা। তাঁরা বললেন, “অনেকবার ডি.আই, চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। কেউ ভ্রুক্ষেপ করেননি, তাই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।” বাঁকুড়ার সোনামুখীর বাসিন্দা রাজীব কুমার দীক্ষিতের ‘কুখ্যাত’ শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র বা মার্কশিট- গুলিও ইতিমধ্যে নেট মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ (Viral) হয়েছে। আর, তা দেখার পর-ই চক্ষু চড়কগাছ সচেতন নাগরিকদের।

thebengalpost.net
স্কুলের সামনে আন্দোলন:

ভাইরাল হওয়া শংসাপত্রগুলি অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে জন্ম গ্রহণ করা রাজীব কুমার দীক্ষিত ২০০৮ সালে থার্ড ডিভিশনে মাধ্যমিক পাস করেছেন রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে। ২০১০- এ উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন ভোকেশনাল বিভাগ থেকে। তারপর অবশ্য ২০১৮ সালে ডি.এল.এড ট্রেনিং করেছেন। কিন্তু, বাংলা-অঙ্ক-ইংরেজি কিছুই না জানা ওই যুবক কিভাবে টেট পাস করলেন আর এই অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে কিভাবেই বা মেধাতালিকায় জায়গা পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন‌ উঠছে। সম্ভবত এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের-ও করতে চলছেন নট ইনক্লুডেড চাকরিপ্রার্থীরা। কারণ, প্রকৃত টেট পাস এবং উচ্চ অ্যাকাডেমিক স্কোর নিয়েও ৭-৮ হাজার চাকরিপ্রার্থী এখনও রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। আর, ২২ বছর বয়সে থার্ড ডিভিশনে মাধ্যমিক পাস করে শিক্ষকতা করছেন এরকম কত হাজার চাকরিপ্রার্থী, এই প্রশ্ন তুলেই মামলা হতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। নট ইনক্লুডেড চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, “এই কি তাহলে মানিক বাবুর (মানিক ভট্টাচার্যের) মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ? জবাবটা ওঁকে আদালতেই দিতে হবে।”

thebengalpost.net
অঙ্ক কষতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে বাঁকুড়ার শিক্ষক রাজীব কুমার দীক্ষিতের:

thebengalpost.net
মাধ্যমিকের মার্কশিট (ভাইরাল, সত্যতা যাচাই করেনি The Bengal Post) :

thebengalpost.net
ভোকেশনাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (সত্যতা যাচাই করেনি The Bengal Post) :