দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৪ জুন: সাম্প্রতিককালের আরো এক নজিরবিহীন নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই চাকরি থেকে ‘বরখাস্ত’ করা হয়েছিল পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী-কে। ফেরত দিতে হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন বছরের বেতন। শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিলেন, আগামী ২৭ জুনের মধ্যে মামলাকারী ববিতা সরকারের হাতে নিয়োগের সুপারিশ পত্র দিতে হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে তাঁর হাতে তুলে দিতে হবে নিয়োগপত্র। শুধু তাই নয়, অঙ্কিতা অধিকারীকে যেদিন থেকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল, সেই দিন থেকেই চাকরির জয়েনিং (২০১৮’র নভেম্বর) ধরতে হবে ববিতা সরকারের। আর, অঙ্কিতার পাওয়া সমস্ত বেতন তুলে দিতে হবে ববিতার হাতে।
উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যেই নিজের বেতনের প্রথম কিস্তি হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন অঙ্কিতা। বিচারপতি সেই টাকা ববিতা সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে। অপরদিকে, আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম থেকে দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের পূর্ণাঙ্গ মেধাতালিকা প্রকাশ করারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন ফর্মের লিঙ্ক-ও দিতে হবে বলে নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের।শুক্রবার এমনই নজিরবিহীন নির্দেশ দিয়ে ফের একবার বঞ্চিতদের ‘নয়নের মণি’ হয়ে উঠলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী বে-আইনিভাবে স্কুলে চাকরি পেয়েছেন, এই অভিযোগ করে যিনি মামলা করেছিলেন, শিলিগুড়ির সেই ববিতা সরকারের নাম ওয়েটিং লিস্টে (প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর) ২০ নম্বরে ছিল। কিন্তু, সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতি করে অঙ্কিতা-কে দ্বিতীয় মেধা তালিকার এক নম্বরে নিয়ে আসায়, ববিতার নাম চলে যায় ২১ নম্বরে। ফলে, মেধা তালিকায় জায়গা পাওয়ার পর-ও চাকরি থেকে বঞ্চিত থেকে যান ববিতা সরকার। এবার, সেই ‘দু-নম্বরি’ করে ‘এক নম্বর’ জায়গা পাওয়া অঙ্কিতা অধিকারীর জায়গাতেই চাকরি পেতে চলেছেন ‘বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী’ ববিতা সরকার।
শুধু তাই নয়, অঙ্কিতা অধিকারী যেদিন চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, সেদিন থেকেই ববিতা সরকারের ‘জয়েনিং ডেট’ গণ্য করতে হবে বলে নির্দেশ বিচারপতির। এদিন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, মামলাকারী ববিতার নম্বর বেশি থাকা সত্ত্বেও ‘লজ্জাজনক ভাবে’ অঙ্কিতাকে ওই তালিকায় এক নম্বরে এনে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। অঙ্কিতাকে চাকরি দেওয়া না হলে ববিতা পেতেন। অপরদিকে, এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের আবেদন মেনে, এসএসসির সার্ভার রুম খোলার অনুমতি দিয়েছেন। তবে, সিবিআই অধিকর্তাদের উপস্থিতিতেই স্কুল সার্ভিস কমিশনকে সার্ভার রুম ব্যবহার করতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, নবম থেকে দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগে নম্বর সহ পূর্ণাঙ্গ মেধা তালিকা প্রকাশ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। যে তালিকায় চাকরি পাওয়া এবং ওয়েটিং লিস্টে থাকা সমস্ত প্রার্থীদের, সঠিক নম্বর বিভাজন প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে বলেও তাঁর নির্দেশ।