দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মুর্শিদাবাদ, ১৬ এপ্রিল: যেমন করে “বীর ডুবুরি সিন্ধু সেঁচে মুক্তো আনে” তেমন করেই পানাপুকুরের কাদা ঘেঁটে জীবনের ফোন উদ্ধার করলেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু, জীবনের এই ফোনে লুকিয়ে কার ‘জীবন’? এই প্রশ্নটাই এখন উঠছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সিবিআই তদন্তে। যেভাবে দু’দুটি ফোন এবং ১-টি পেন ড্রাইভ উঁচু পাঁচিলে উঠে পানাপুকুরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞা’র বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা, তাতে এটুকু অন্তত সিবিআই তদন্তকারীদের বুঝ নিতে অসুবিধা হয়নি যে, জীবনের ফোনে নিয়োগ কেলেঙ্কারির অনেক ‘গুপ্তধন’ লুকিয়ে আছে! আছে, গোপন চ্যাট। থাকতে পারে অনেক তালিকা কিংবা সুপারিশও। সর্বোপরি, থাকতে পারে উপরমহলের সঙ্গে যোগাযোগের প্রত্যক্ষ প্রমাণও! সিবিআই (CBI) এর প্রাথমিক ধারণা প্রায় ৩০০-৪০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে জীবনের মাধ্যমে। আর তাই, চার-চারটি পাম্প নিয়ে এসে টানা দু’দিন ধরে ওই পানাপুকুরের জল সেঁচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তদন্তকারীরা। অবশেষে, ৩২ ঘণ্টা তল্লাশির পর একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার সকাল ৭টা ৪০ নাগাদ সিবিআই তদন্তকারী দলের উপস্থিতিতে একটি মোবাইল উদ্ধার করেছেন এই কাজের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় শ্রমিকরা। আরেকটির খোঁজে তল্লাশি চলছে। ইতিমধ্যে যদিও প্রায় ৩৭ ঘন্টা অতিক্রান্ত! ফলে, ওই মোবাইল থেকে আদৌ কোন ডেটা উদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বানতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর থেকে ওই পুকুরে মোট তিনটি পাম্প বসিয়ে জল সেঁচা বা ছেঁচার কাজ চলছিল। শনিবার রাত ১টা নাগাদ পাম্প বন্ধ করা হয়। প্রাথমিক ভাবে সিবিআই মনে করেছিল, পুকুরের সমস্ত জল তুলে ফেলা গিয়েছে। কিন্তু, রবিবার ভোররাত থেকে আবার পুকুরে জল বাড়তে থাকে। ভোর ৩-টে নাগাদ আরও একটি পাম্প চালানো হয় জল তোলার জন্য। রবিবার সকাল ৭-টা ২০ মিনিট নাগাদ ওই পুকুরের সব জল তুলে ফেলা সম্ভব হয়। এর পর, ৭-টা ৪০ নাগাদ একটি মোবাইল খুঁজে পান শ্রমিকরা। এই কাজে হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয় ৪ জন শ্রমিক এবং এক মৎস্যজীবী। পরে আরও ৪-৫ জনকে কাজে লাগিয়েছেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যে, মোবাইলটি প্রযুক্তিবিদদের হাতে তুলে দিয়েছেন সিবিআই তদন্তকারীরা।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা’র বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। তখনই তিনি শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে, জেলখানার মতো উঁচু পাঁচিলে উঠে নিজের দু’টি মোবাইল বাড়ির পাশের পানা পুকুরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। সেই থেকে পুকুরে চিরুনিতল্লাশি চালাচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। যদিও, এর মধ্যেই জীবনকৃষ্ণ সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে পাঁচ বস্তা নথি উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। বাড়ির পাশের একটি জেরক্স দোকান থেকেও কিছু নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। SLST’র নবম-দশমের ৩৪০০ জনের নামের তালিকা সহ আপার প্রাইমারি, প্রাইমারি সহ প্রায় ৫-৮ হাজার চাকরিপ্রার্থীর বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টস উদ্ধার হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে। সবমিলিয়ে, উদ্ধার হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত জীবনকৃষ্ণ। কেন তাঁর বাড়িতে চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা? তা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর,জীবন যা জবাব দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যে, তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে। কুন্তলের সঙ্গে জীবনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়টিও সিবিআই আধিকারিকরা খতিয়ে দেখছেন। অভিজ্ঞ আইনজীবীদের বক্তব্য, এই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে জীবনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পারেন তদন্তকারীরা। আজ বিকেল বা রাতের মধ্যেই জীবনকৃষ্ণ সাহাকে সিবিআই গ্রেফতার করতে পারে বলেও সূত্রের খবর। অন্যদিকে, বীরভূমের নলহাটির ‘অনুকূল-ভক্ত’ (তেমনই পরিচয় দেন) বিভাস অধিকারীকেও আজ সিবিআই কলকাতায় তলব করেছে বলে জানা গেছে। ফলে, বিভাস, গোপাল (দলপতি)-দের গ্রেফতারিও যে শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা তা বলাই বাহুল্য!