তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ এপ্রিল: বিশ্ব উষ্ণায়নের কবলে পড়ে গোটা পৃথিবীর তাপমাত্রা আজ ঊর্ধ্বমুখী। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, প্রকৃতি আজ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন। ভারতের জন্যও আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, এদেশের ৯০ শতাংশ অঞ্চল চরম উষ্ণাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম যথাক্রমে বিশ্বের সপ্তম ও নবম উষ্ণতম শহরে পরিণত হয়েছে! তাই, পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, অবিলম্বে বৃক্ষরোপণ বা সবুজায়ন সহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করলে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের প্রত্যন্ত ঘোলা গ্রামের এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা অভূতপূর্ব শিক্ষা দিয়ে গেলেন সমগ্র সমাজকে। সবুজ পৃথিবীর বার্তা দিতে, রবিবার (২৩ এপ্রিল), শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্য লগ্নে ১টি বট এবং ১টি অশ্বত্থ গাছকে তিনি সন্তান রূপে গ্রহণ করলেন। রীতিমতো শাস্ত্র বিধি মেনে, পূজার্চনার মধ্য দিয়ে মহাসাড়ম্বরে তাঁর পরিবারে এই দু’টি গাছকে স্বাগত জানান পাঁজা পরিবারের বর্ষীয়সী সদস্যা সন্ধ্যারানী পাঁজা।
প্রকৃতি তথা গাছের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তথা সন্তান হিসেবে লালন-পালন করার উদ্দেশ্যেই রীতিমতো শাস্ত্র বিধি মেনে, পূজার্চনার মাধ্যমে সন্তান হিসাবে গাছ দু’টিকে দত্তক নেন বৃদ্ধা সন্ধ্যারানী। হিন্দু শাস্ত্র মতে, রীতিমতো হোম যজ্ঞ সহকারে রবিবার একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন পাঁজা পরিবার। আয়োজন করা হয়েছিল ভুরিভোজেরও। আর তাতে কার্যত কবজি ডুবিয়ে খেয়ে গেলেন এলাকার বাসিন্দারা। পরিবারের অন্যতম সদস্য তথা সন্ধ্যরানী পাঁজা’র এক ছেলে বিকাশ পাঁজা বলেন, “আমরা অতি-আধুনিক হতে গিয়ে গাছকে অবহেলা করে, সামান্য কারণেই গাছ কেটে ফেলে নিজেরাই বিশ্ব উষ্ণায়নকে ডেকে এনেছি। আর, আজ তার ফল ভোগ করছি। তাই, এই পরিস্থিতিতে আমার (বা, আমাদের) মা যেভাবে গাছের প্রতি নিজের আন্তরিক ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, তাকে মর্যাদা দিয়েই আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আমরা ভাইয়েরাও (বৃদ্ধার সন্তানেরা) সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী দিনে প্রত্যেকেই একটি-দু’টি গাছকে সন্তান স্নেহে লালন পালন করব। এভাবেই একমাত্র আমরা পরিবেশকে সুস্থ রাখতে পারব।” এদিনের এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন চন্দ্রকোনা ১নং ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।