দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ মে:১৮ বছর আগে একটি পথ দুর্ঘটনায়, রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু হয়েছিল, রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম কর্মী বিবেকানন্দ করণের। তাঁর স্মৃতিতে, গত ১৮ বছর ধরে, তাঁর প্রয়াণ দিবসের দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে আসছেন পরিবারের সদস্যরা। রবিবার (২৯ মে), ১৮ তম প্রয়াণ দিবসেও যথারীতি এই শিবির আয়োজিত হয়। জানা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের বাঁকা এলাকার বাসিন্দা বিবেকানন্দ করণ ১৮ বছর আগে (২০০৫ সালে) একটি পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। সেই সময় তাঁর একমাত্র কন্যা সোমদত্তা’র বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। এখন, ২১ বছরের তরণী সোমদত্তা মায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুধুই যে রক্তদান শিবির আয়োজন করে তা নয়, নিজেও এগিয়ে আসে রক্তদানে!
পরিবার ও এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা যায়, বিবেকানন্দ বাবু নিজের ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। এলাকার মানুষের প্রয়োজনে রক্তের যোগাড় করে দেওয়ার কাজেও হাত বাড়িয়ে দিতেন। এলাকায় তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। গত ২০০৫ সালে, একটি পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মক রক্তক্ষরণের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। তার পর, ২০০৬ সাল থেকে, এলাকার একটি জনপ্রিয় রক্তদান আন্দোলনের সংগঠন ক্ষীরপাই নবারুণ সংঘের সহযোগিতায় ‘করণ ভবন’ এ আত্মীয়-বন্ধু-শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে রক্তদান শিবির শুরু হয়। বিবেকানন্দ বাবু’র মেয়ে সোমদত্তা তার ৪ বছর বয়স থেকেই বাবার মৃত্যু দিনের এই শিবির উদ্বোধন করে আসছে। বর্তমানে, সোমদত্তা কলেজ ছাত্রী। সদ্য ১৮-র গন্ডী পেরিয়ে এবার সে বাবার রক্তদান শিবিরের দায়িত্ব নিয়েছে। পাশে পেয়েছে মা এবং কাকু সহ অন্যান্যদের। রবিবার বিবেকানন্দ করণের ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে ৪৫ জন রক্তদাতা রক্ত দান করেন। রক্তদান করে সোমদত্তা নিজেও। এদিনের শিবিরে উপস্থিত ছিলেন, চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী, চন্দ্রকোনা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সূর্যকান্ত দোলই, ক্ষীরপাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ প্রশান্ত কীর্তনীয়া প্রমুখ।
এদিন সোমদত্তা জানায়, “বাবার যখন মৃত্যু হয়েছিল আমার বয়স ছিল তিন বছর। তখন সেভাবে আমার বোঝার বয়স হয়নি। কিন্তু, প্রতিবছর বাবার মৃত্যু দিনে আয়োজিত শিবিরে আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থেকেছি। দেখতাম অনেকেই বাবাকে নিয়ে প্রশংসা করতেন। আমরা তাই পরিবারের পক্ষ থেকে এই শিবির চালিয়ে যাব।” ক্ষীরপাই নবারুনের সম্পাদক তনুপ ঘোষ বলেন, “বিবেকানন্দ করণ আমাদের সংগঠনের সভাপতি থাকাকালীন পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। আমরা তাই ঠিক করেছিলাম, তিনি যেহেতু আমাদের রক্তদান আন্দোলনের কর্মী ছিলেন, রক্তদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাব। তাই, ২০০৬ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে, আত্মীয় বন্ধুদের নিয়ে এই শিবির সংগঠিত হচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে এত বছর ধরে পারিবারিক রক্তদান শিবির পশ্চিমবঙ্গে প্রথম। এই শিবিরের প্রথমদিকে দায়িত্বভার তুলে নিয়েছিলেন বিবেকানন্দ বাবুর স্ত্রী চন্দনা করণ। পরবর্তীকালে, তাঁর মেয়ে ও ভাই এই শিবির পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছেন।”