দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৪ মার্চ:”যারা অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি দিন। কঠোর শাস্তি দিন। কিন্তু, ছেলে-মেয়েগুলোকে ভিকটিমাইজ করবেন না। তারা তো কোনো দোষ করেনি… হঠাৎ চাকরি চলে গেলে সে খাবে কি?” মঙ্গলবার বিকেলে আলিপুর আদালতের একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চ থেকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি এবং আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে কাতর আবেদন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আরও আবেদন, “যাদের চাকরি যাচ্ছে, আইন অনুযায়ী তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিন। দরকার হলে তাদের আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিন। যা আপনারা বলবেন, তাই আমরা করতে রাজি। কিন্তু, দয়া করে কথায় কথায় ওদের চাকরি খাবেন না!”

thebengalpost.net
কাতর আবেদন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের:

নিজের বক্তৃতার শেষ পর্বে প্রায় কান্না ভেজা গলায় ঠিক এমনটাই আবেদন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বোঝা গেল, সম্প্রতি রাজ্যের কয়েক হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীর চাকরি যাওয়াতে তথা নিয়োগ দুর্নীতি বেআব্রু হয়ে পড়ায় এবং একের পর এক তৃণমূল নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক থেকে আধিকারিকদের গ্রেফতারিতে বস্তুতই ভেঙে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! উল্লেখ্য যে, এদিন আলিপুর আদালতের বার কাউন্সিলের উদ্যোগে ঋষি অরবিন্দের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তি উন্মোচিত হয়। বার কাউন্সিলের আমন্ত্রণে মূর্তি উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর সমবেত সঙ্গীতে (মুক্তির মন্দির সোপান তলে) অংশগ্রহণও করেন। এরপর বক্তৃতা দিতে উঠে, একদিকে তিনি যেমন কলকাতার বুকে চলতে থাকা ডি.এ আন্দোলন এবং কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক ডি.এ সংক্রান্ত রায় বা নির্দেশের বিরুদ্ধে নিজের মতামত তুলে ধরেন; অন্যদিকে সরকারের একাধিক সামাজিক প্রকল্পের (কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, জয় জোহার থেকে মাস পয়লা বেতন) কথা তুলে ধরে বারবার আবেদন করেন, “আপনারা কি এমন মানবিক সরকারের পাশে দাঁড়াবেন না?”

এরপরই, নিজের বক্তব্যের একেবারে শেষ পর্বে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা হাইকোর্টের বাম মনোভাবাপন্ন আইনজীবীদের প্রতি একদিকে যেমন কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন, ঠিক তেমনই বিচারপতিদের উদ্দেশ্যেও কাতর আবেদন করেন, “আমি কিন্তু ক্ষমতায় এসে একজন সিপিআইএম ক্যাডারের চাকরিও খাইনি…এখন রোজ কথায় কথায় ৩ হাজার, ৪ হাজার চাকরি বাদ। সবাই তো আর তৃণমূলের ক্যাডার নয়, সরকারের ক্যাডার নয়। আমার লোকও অন্যায় করে থাকলে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু কেউ ভুল করলে, তার দায় অন্যরা নেবে কেন?…গতকালও দেখলাম দু’জন আত্মহত্যা করেছে! আজ সকালে কাগজে দেখলাম জলপাইগুড়িতে একজন আত্মহত্যা করেছে। আমার মনটা আজ সকাল থেকেই কাঁদছে!…আমি বলব, একটু ভেবে দেখতে। আমি প্রধান বিচারপতিকে (কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব) সামনে পেলাম না। সুব্রত দা (বিচারপতি সুব্রত তালুকদার?)-র সঙ্গে কথা বললাম। যারা চাকরি হারিয়েছে, দয়া করে আইন অনুযায়ী তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিন। হাইকোর্ট বন্দোবস্ত করুক। সিদ্ধান্ত নিক। আমাদের যা বলবে, আমরা তাই করে দেব। কিন্তু, দয়া করে কথায়-কথায় চাকরি খাবেন না!” এ প্রসঙ্গেই নিজে কিছু মামলায় লড়াই করারও ইচ্ছে প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “সুযোগ পেলে আমাকে সুযোগ দেবেন। কথা দিচ্ছি পয়সা নেব না!” আসলে মুখ্যমন্ত্রী হয়তো ‘ভুয়ো’ প্রার্থীদের চাকরি বাঁচাতেই তাঁর ‘কাতর আবেদন’ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের সামনে তুলে ধরে, তাঁদের উপর প্রকারান্তরে ‘মানসিক চাপ’ সৃষ্টি করতে চাইছেন! এমনটাই বলছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ।

thebengalpost.net
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী:

thebengalpost.net
Advertisement (বিজ্ঞাপন):