দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ জুলাই: নীচু ক্লাসের ছাত্রীদের উপর দীর্ঘদিন ধরে চলছিল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা র্যাগিং। চলছিল তাদের দিয়ে হাত-পা টেপানো, নিজেদের টিফিন বক্স ধোয়ানো ছাড়াও কুৎসিত ভঙ্গিতে নাচ করতে বাধ্য করানো, এমনকি নগ্ন করে ভিডিও করা- প্রভৃতি। এমনটাই অভিযোগ বিদ্যালয়ের উঁচু ক্লাসের (একাদশ-দ্বাদশের) নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাত্রীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদ করে, শিক্ষিকাদের এবং বাড়িতে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলতেই, শুক্রবার ‘দিদিরা’ একদম ‘ছুরি’ নিয়ে এসে হাজির! আতঙ্কিত ওই ছোট ছোট ছাত্রীরা (সিক্স-সেভেনের ছাত্রীরা) ঘটনার কথা বাড়িতে জানানোর পরই শুক্রবার বিকেলে এবং শনিবার সকাল থেকে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয় বিদ্যালয় চত্বরে। ঘটনাটি জেলা শহর মেদিনীপুরের স্বনামধন্য এক বালিকা বিদ্যালয়ের। শনিবারের বিক্ষোভের পরই নড়েচড়ে বসেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই ঘটনায় ৮ জন ছাত্রী-কে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে আগামী সোমবার (১ আগস্ট)-ই বিদ্যালয়ের সর্বত্র লাগানো হবে সিসিটিভি। এদিকে, শহরের এমন নামকরা স্কুলের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলাজুড়ে।
অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্রী নীচু ক্লাস অর্থাৎ পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীদের উপর নানা ভাবে অত্যাচার চালায়। নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ করানো, বাথরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে লাগিয়ে দেওয়া, মারধর করা, গায়ে জল ঢেলে দেওয়া- এসব চলতেই থাকে। এরপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে বলে অভিযোগ! কুৎসিত ভঙ্গিতে নাচ করতে বাধ্য করিয়ে তা ভিডিও করা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অভিযোগ, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর দিদিদের অত্যাচারের বিষয়ে শিক্ষিকাদের জানানোয় শুক্রবার ক্লাসের মধ্যে ছুরি নিয়ে এসে ভয় দেখায়! ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বেশকিছু ছাত্রী। এরপর, তারা বাড়িতে জানানোর পরই শুক্রবার শেষ বেলায় অভিভাবকরা এসে বিক্ষোভ দেখান। শনিবার নীচু ক্লাসের অনেক ছাত্রী আতঙ্কে স্কুল-ই আসতে চাইছিল না বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তাই, শনিবার সকাল থেকে অভিভাবকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন! এক ছাত্রীর অভিভাবিকা বলেন, “মাসখানেকের বেশি সময় ধরে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ভয়ে আমার মেয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্কুলেই আসতে চায়না। দিদিমণিরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। স্কুলে সিসিটিভি নেই! আমরা আতঙ্কিত।” অভিভাবকদের দাবি, যারা এই নোংরা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, ৮ জন ছাত্রী-কে চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার থেকেই সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হবে। আগামী বুধবার অভিভাবকদের নিয়ে মিটিং ডাকা হয়েছে। তারপরই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।