thebengalpost.net
বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক (প্রতীকী ছবি):

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ মার্চ: ওএমআর (OMR) কারচুপি করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত চাকরি বাতিল হয়েছে প্রায় ৪০০০ জনের। সংখ্যাটা আগামী ১-২ মাসের মধ্যে আরও বাড়বে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। এদিকে, এই ৪০০০ (Gr-D ১৯১১, Gr-C ৮৪২, SSC Nine-Ten ৭৭৫, Pri. ২৫৭) জনের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী প্রায় ৪৫০ জন বলে জেলা শিক্ষা ভবন সূত্রে খবর। এর মধ্যে, প্রায় ৩০০ জন গ্রুপ- ডি বা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী; ৭৬ জন গ্রুপ- সি বা ক্লার্ক এবং ৭৭ জন নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষক। এঁদের সকলেই প্রায় ৪-৫ বছর চাকরি করার পর, আদালতের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন। ফলে, একদিকে যেমন ওই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তাঁদের পরিবারগুলি বিপদে পড়েছেন, ঠিক তেমনই বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও! কারণ, এই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা লোন বা ঋণ নিয়ে নানা কাজকর্ম করেছিলেন। ইতিমধ্যে, তাঁদের বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সমস্যা। ফলে, মোটামুটিভাবে চলতি মাস (মার্চ) থেকেই তাঁদের লোনের ইনস্টলমেন্ট বা মাসিক ইএমআই (EMI) জমা পড়ছেনা ব্যাঙ্কের খাতে! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক ব্যাংক সূত্রে ঠিক এমনটাই জানা গেছে।

thebengalpost.net
তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক:

প্রসঙ্গত, স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই ওই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একটা বড় অংশ চাকরির কয়েক মাস বা ১-২ বছর কেটে যাওয়ার পর, ব্যাঙ্ক লোন বা ঋণ নিয়ে ঘরবাড়ি করেছিলেন কিংবা যানবাহন, জায়গাজমি কিনেছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ নিয়োগ কেলেঙ্কারি সামনে আসে ২০২১ সাল থেকে। এদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের শিক্ষা বিষয়ক বেঞ্চে আসেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক বিচারপতি। যিনি আবার দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে, আঁটঘাট মোটামুটি জানাই ছিল! দুর্নীতি ধরে ফেলতে বিশেষ দেরি হয়নি। তৎকালীন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে দিয়ে শুরু করেছিলেন! একের পর এক চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া শুরু করেন। এখনও তা বজায় আছে। আর, এতেই সমস্যায় রাজ্যের প্রায় ৪ হাজার পরিবারের সঙ্গে একের পর এক ব্যাঙ্ক! এর মধ্যে অধিকাংশই আবার সমবায় ব্যাঙ্ক। অন্তত পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে তেমনটাই দেখা যাচ্ছে।

জানা যায়, বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক প্রভৃতি নানা ব্যাঙ্ক বেশ কয়েক কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিলেন এই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের। এখন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পড়েছে মহা বিপাকে। মোটামুটিভাবে ১-২ মাস করে ঋণখেলাপি হওয়া শুরু হয়েছে। এটা ৩ মাস হয়ে গেলেই, প্রথমে ওই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বাড়িতে চিঠি পাঠানো শুরু হবে ব্যাঙ্কের তরফে। তারপর তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এমনকি, সরকারের কাছেও বিষয়টি জানানো হবে বলে ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়। তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে যেমন দুই মেদিনীপুর মিলিয়ে ৫৭ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীকে দেওয়া ৫ কোটি টাকার ঋণ আদায় নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যদিও, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, “নিয়ম মেনে ব্যাঙ্ক ঋণ দিয়েছিল। এখন নিয়ম মেনেই প্রক্রিয়া করা হবে। তবে, এই টাকার জন্য ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্যহানি হবেনা। কারণ, ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত ও দাদনের পরিমাণ অনেক বেশি।” একই কথা জানিয়েছেন, বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও। বেশকিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও অবশ্য এই তালিকায় আছে বলে সূত্রের খবর। তবে, শেষ পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে, সেই বিষয়ে এখনও অবধি ব্যাঙ্কের তরফে বা প্রশাসনের তরফে কোনো সদুত্তর মেলেনি।

thebengalpost.net
বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক (প্রতীকী ছবি):

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):