দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: রক্তদানের পুণ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর)। ওই দিনই হাওড়া জেলার সালকিয়া এলাকার শিক্ষিকা সুমনা ভট্টাচার্যের ১৮ বছরের সমস্যা সমাধান করে মানবিকতার নজিরও গড়েছিলেন। তিনি কৃষ্ণেন্দু বিষই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের (DPSC) নতুন চেয়ারম্যান। সদ্য তাঁর হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে। সেই কৃষ্ণেন্দু বিষই-কে বৃহস্পতিবার জেলা শহরের বিদ্যাসাগর ভবনে (সংসদ কার্যালয়ে) সংবর্ধনা জানাতে গিয়ে ‘আবেগাপ্লুত’ হয়ে পড়লেন মেদিনীপুর শহরের (সদর আর আর চক্রের) শিক্ষক-শিক্ষিকারা! আনন্দে চোখে জল চলে এলো শিক্ষক বিভাস ভট্টাচার্য, গোলাম মোর্তজা, সুরজিৎ দে প্রমুখদের। কারণ, এই চেয়ারম্যান যে “তাঁদেরই লোক”! এতদিন, চন্দ্রকোনা রোড জিএসএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা কৃষ্ণেন্দু যে অন্তর থেকে প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমস্যা বুঝবেন এবং দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা করবেন, এমনটাই তাঁদের আশা-আকাঙ্খা ও বিশ্বাস। তাই, চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি শিক্ষক-শিক্ষিকারা! প্রথমদিনই সুমনা-র সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছেন কৃষ্ণেন্দু’ও। তাই, অন্তরের তৃপ্তি আনন্দাশ্রু হয়েই নির্গত হল বিভাসদের। আবেগমথিত হলেন কৃষ্ণেন্দু-ও। বললেন, “এভাবেই ওঁদের নিজেদের লোক হয়েই কাজ করে যেতে চাই। একজন শিক্ষক ছিলাম, পরবর্তী সময়ে শিক্ষা দপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে কাজ করেছি। সবসময়ই শিক্ষকদের জন্য এবং জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, ভবিষ্যতেও তাই করব।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২১ টি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান পরিবর্তন করা হয়। যেখানে স্থায়ী চেয়ারম্যান ছিলনা, সেখানে স্থায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন কৃষ্ণেন্দু বিষই। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে, সংসদ কার্যালয়েই আয়োজন করেছিলেন একটি রক্তদান শিবিরের। ওইদিন, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) তথা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান তরুণ সরকার কৃষ্ণেন্দু’র হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, গত ১৮ বছর ধরে চাকরির কনফার্মেশন লেটার (Confirmation Letter) না পাওয়া সুমনা ভট্টাচার্য নামের এক শিক্ষিকার হাতে স্থায়ী নিয়োগপত্র তুলে দেন। সুমনা ২০০৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। বিয়ের পর হাওড়া জেলায় বদলি নিয়ে নেন। কিন্তু, গত ১৮ বছর ধরে তাঁকে কনফার্মেশন লেটারের বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি! তিনিও খোঁজ নেননি। এরপর, ১৮ বছর চাকরি হয়ে যাওয়ার পর সরকারি যে সুবিধা বা অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়, সেটির আবেদন করতে গিয়েই প্রয়োজন হয় এই কনফার্মেশন লেটারের। অবশেষে, নতুন চেয়ারম্যানের উদ্যোগে শিক্ষিকার হাতে তুলে দেওয়া হয় কনফার্মেশন লেটার। চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই এর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শিক্ষিকা সুমনা ভট্টাচার্য। কৃষ্ণেন্দু’ও অঙ্গীকার করেন, জেলার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অবিরামভাবে কাজ করে যাবেন।