দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ জুন: এভাবেও যুদ্ধ জয় করা যায়! এ যুদ্ধ অবশ্য প্রাণ বাঁচানোর, মানবতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। পশ্চিম মেদিনীপুরের ছোট্ট সুপ্রীতির প্রাণ বাঁচিয়ে আপাতত সে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন জেলার রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠক, সমাজকর্মী, আধিকারিক থেকে রাজধানী কলকাতার সরকারি হাসপাতাল। যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল মাস দেড়েক আগে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার শ্যামখুরি গ্রামের বছর ১১’র শিশুকন্যা সুপ্রীতি পাল বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানেই জানা যয়, সুপ্রীতি থ্যালাসেমিয়া-তে আক্রান্ত।এরপর, নিয়মমাফিক কিছু টেস্ট করেই রক্ত দিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই, বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা আসতে শুরু করে সুপ্রীতির শরীরে! চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন সুপ্রীতি বিরল কোন থ্যালাসেমিয়াতে আক্রান্ত। কিন্তু, এই জেলার ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল কিংবা মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়ার বিরল শ্রেণিগুলি বোঝার মত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকাঠামো নেই। স্বাভাবিকভাবেই সুপ্রীতিকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, সুপ্রীতি E-BETA থ্যালাসেমিয়াতে আক্রান্ত! ওর জন্য O+ (ও পজিটিভ) ব্লাড লাগবে, কিন্তু যার কম্পনেন্ট হবে ই-নেগেটিভ (E-) এবং ফেনোটাইপ R2R2। যা গোটা রাজ্যে মাত্র কয়েকজনের আছে, যার মধ্যে মাত্র দু’জনের রেকর্ড (তথ্য) আছে কলকাতা হাসপাতালে। এরপরই সৃষ্টি হল নতুন এক ইতিহাস!
এই পুরো ঘটনা তথা সুপ্রীতির জন্য বিরল রক্ত সংগ্রহের লড়াইয়ের সঙ্গে আপাদমস্তক যুক্ত ছিলেন মেদিনীপুর শহরের সুপরিচিত সমাজকর্মী ও শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত। শনিবার সকালে তিনি জানান, “কলকাতা মেডিক্যাল তার ডাটা ব্যাংক চেক করে বলে যে পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে জীবিত মাত্র ২ জনই আছেন, যাঁদের সাথে সুপ্রীতি’র বিরল রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করে। এঁদের মধ্যে একজন বিদেশে থাকেন। অন্যজন অবশ্য কলকাতার অদূরে নৈহাটির বাসিন্দা। তড়িঘড়ি নৈহাটি থেকে ওই ভদ্রলোককে এনে এক ইউনিট ব্লাড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজের উদ্যোগে। কিন্তু, প্রয়োজন আরো এক ইউনিট রক্তের। আর, তা জোগাড় করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ সহ ওই পরিবারকে।” মৃত্যুঞ্জয় আরো জানান, “রোগীর পরিবার ব্লাড টেস্টের রিপোর্টটি বিভিন্ন পরিচিতজনকে দেন। সেখান থেকে চারিদিকে ছড়াতে থাকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরও করা হয়। আমার বন্ধু বিপ্লব জানা গত ৭ জুন বিকেলে ফোন করে পুরো বিষয়টি আমাকে জানায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করি ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সদস্য তথা মেদিনীপুর জেলা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের চেয়ারম্যান অসীম ধরের সঙ্গে। ৯ জুন সকালে সুপ্রীতি’র বাবা সুজিত পাল মেদিনীপুর এসে আমার ও অসীমদার সাথে দেখা করে সমস্ত কাগজপত্রও দিয়ে যান। আমরা বুঝতে পারি, এটা কোন সাধারণ থ্যালাসেমিয়া নয়! তারপরই, আমরা আমাদের মত করে লড়াই শুরু করি। অসীম দা যোগাযোগ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে এবং তাঁদের মারফত কলকাতা মেডিকেল কলেজের আধিকারিকদের সঙ্গে। আমি যোগাযোগ করি রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস এবং পশ্চিম মেদনীপুর জেলার প্রাক্তন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) অম্লান কুসুম ঘোষের সাথে। তাঁরাও বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ শুরু করেন। সর্বপরি বারবার ফোন করেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের আধিকারিকদের সঙ্গে।”
শেষ পর্যন্ত, ওই বিরল গ্রুপের এক রক্তদাতার সন্ধান মেলে মুম্বাইতে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের তৎপরতায় তিনি মুম্বাইতে রক্তদান করেন। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা, শিক্ষক ও সমাজকর্মী মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত জানান, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের উদ্যোগে, মুম্বাই থেকে সেই রক্ত বিমানে করে ১৫ জুন রাতে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। আর, এই পুরো বিষয়টিতে বারবার তদারকি করেন অসীম বাবু, সুমন বাবু এবং অম্লান বাবুরা। তাঁদের সঙ্গে সুপ্রীতি’র পরিবারের সমন্বয় রেখে চলার কাজটা করে যাই আমি। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার বিকেলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে সুপ্রীতি’র শরীরে ব্লাড ট্রান্সফার। তারপর স্বাভাবিক নিয়মেই ছোট্ট শিশুকন্যার শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। কিছু স্বাভাবিক জটিলতাও দেখা দেয়। বেশ কয়েক ঘন্টা পর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়। আগামীকাল শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুপ্রীতি-কে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানতে পেরেছি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত এক বছরের জন্য স্বস্তি!” ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সদস্য তথা মেদিনীপুর জেলা ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের চেয়ারম্যান অসীম ধর বলেন, “এখনো অনেকে রক্তদানের কথা বললে উপেক্ষা করেন। কিন্তু, রক্তদান যে সত্যিই জীবন দান, তা আবারো একবার প্রমাণিত হলো! ধন্যবাদ জানাই কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ওই মহান রক্তদাতাকে।” মৃত্যুঞ্জয় বলেন, “এখনো যে মানবতা এই সমাজ থেকে উবে যায়নি, এই ঘটনাটা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। হাজার হাজার মানুষ সুপ্রীতি’র বিষয়টি সমাজ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন, অসংখ্য মানুষ ফোন করেছেন আমাদের। সর্বোপরি, ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস সহ রাজ্যের আধিকারিকদের তৎপরতা ছাড়া এত সহজে এই যুদ্ধ-জয় সম্ভব হতোনা!”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…