thebengalpost.net
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ, অবরোধ:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ আগস্ট: ১৯ বছরের প্রেমিক আর ১৭ বছরের প্রেমিকা। প্রেমের সম্পর্ক-ও মাত্র মাস ছয়েকের! কিন্তু, প্রথম থেকেই প্রেমিককে সন্দেহ করত প্রেমিকা। প্রেমিকের চরিত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়ের নাম দিয়ে ‘ভুয়ো অ্যাকাউন্ট’ও খুলেছিল প্রেমিকা। তাতেই সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় প্রেমিকার কাছে! এনিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিল মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটি কিরণময়ী স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মৌমিতা মুখী (১৭)। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকের প্রতারণা সহ্য করতে না পেরে, সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয় মৌমিতা। মৃত্যুর আগে একটি ডায়রিতে একটি সুইসাইড নোটও লিখে যায় ওই ছাত্রী। তার ছত্রে ছত্রে অস্ফুট বেদনা! সোমবারের এই মর্মান্তিক ঘটনায় শহরের রাঙামাটি এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। ওই প্রেমিকাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে অবরোধ-ও হয়। সন্ধ্যা নাগাদ লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অবশ্য ১৯ বছর বয়সী প্রেমিককে গ্রেপ্তার-ও করে কোতোয়ালী থানা।

thebengalpost.net
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ, অবরোধ:

জানা যায়, বছর পাঁচ-ছয়েক আগেই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ছেড়ে চলে যান মৌমিতার বাবা। তখন মৌমিতার বয়স ১০-১২। আর, ভাইয়ের বয়স ১-২। বর্তমানে তাদের বাবা কোথায় থাকেন, সেই খোঁজও রাখেননি পরিবারের কেউ। একইভাবে মৌমিতাদেরও খোঁজ রাখেননি তার বাবা। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পরিচারিকার কাজ করেই এক মেয়ে ও এক ছেলেকে (৮) নিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন রাঙামাটি এলাকা সংলগ্ন ঝর্নাডাঙ্গার বাসিন্দা রুমা মুখী। কিন্তু, মেয়ের অকাল মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি! কান্নাভেজা গলায় তিনি বলেন, “আমি লোকের বাড়ি কাজে গিয়েছিলাম। সাড়ে দশটা নাগাদ ফিরে এসে দেখি ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ রয়েছে। মেয়েকে অনেক ডাকাডাকি করি। কিন্তু, কিছুতেই কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না!” স্থানীয় সূত্রে খবর, মৌমিতা সাড়াশব্দ না দেওয়ায়, প্রতিবেশিদের ডাকাডাকি শুরু করেন তার মা। প্রতিবেশি কয়েকজন যুবক এসে ঘরের দরজা ভাঙতেই দেখেন, গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে ঝুলছে মৌমিতা! দেহের পাশে একটি সুইসাইড নোট রাখা রয়েছে। ফোনটি বেজেই চলেছে। সুইসাইড নোটে স্থানীয় এক যুবককে (১৯) মৃত্যুর জন্য দায়ী করে সুইসাইড নোটটি লিখে গেছে মৌমিতা। নোটের শেষে লেখা, আই লাভ ইউ মা, আই লাভ ইউ ভাই, আই লাভ ইউ…(কয়েকজন বান্ধবীর নাম)। এরপর পুলিস এসে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তদন্তের জন্য মৌমিতার মোবাইল ফোন, ও ডায়রিও নিয়ে যায় পুলিশ।

স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর শহরের তাঁতিগেড়িয়ার উড়ানপাড়ায় বাড়ি বছর ১৯-এর ওই যুবকের। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে আগেই। গত ছ’মাস ধরে মৌমিতার সঙ্গে প্রেম করত সে। মৌমিতার স্কুলের বান্ধবীরা জানাচ্ছে, ছেলেটির সঙ্গে অন্য মেয়েদের-ও সম্পর্ক ছিল। একথা জানতে পারে মৌমিতা। প্রেমিককে হাতেনাতে ধরতে ফেসবুকে বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে ফাঁদ পাতে সে। ধরা পড়ে যায় প্রেমিক। এনিয়ে প্রায়শই ক্লাসের মধ্যে মন খারাপ করে বসে থাকত সে। যুবককে শোধরানোর চেষ্টাও কম করেনি মৌমিতা। কিন্তু, গত কয়েকদিন ধরে ঘুরিয়ে তাকে এড়িয়েই যাচ্ছিল ওই যুবক। মৌমিতার ফোন নম্বর ব্লকও করে দেয়। মৌমিতার এক বান্ধবী বলে, “স্কুল যাবে কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য আমি সকাল ১০টার পর থেকে ওকে একাধিকবার ফোন করেছি। কিন্ত, ও ফোন না তোলায় ওর বাড়িতে যাই। দেখি সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছে। আমি ওর প্রেমিককে ফোন করে ঘটনার কথা জানাই। কিন্তু, দেখি তার কোনও হেলদোল নেই! ঘুরিয়ে সে জিজ্ঞেস করছে, মৌমিতা বেঁচে আছে নাকি মারা গিয়েছে?” এরপরই, ওই যুবককে গ্রেফতার করার দাবিতে উত্তাল হয় এলাকা। সন্ধ্যা নাগাদ রাঙামাটি উড়ালপুল এলাকায় পথ অবরোধ-ও হয়। তারপর, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার তাকে মেদিনীপুর আদালতে তোলা হয় বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রে।

thebengalpost.net
ময়নাতদন্তের পর মৌমিতার দেহ নিয়েই হয় বিক্ষোভ: