দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ অক্টোবর: রক্ষকই ভক্ষক। একেবারে জলজ্যান্ত উদাহরণ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই পুলিশ কর্মী! মা’কে ভোগ করতে চেয়েও, ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর কিশোর-কিশোরী ছেলে-মেয়ের উপর রাতের অন্ধকারে নির্মম অত্যাচার! অভিযুক্ত, খড়্গপুর গ্রামীণ থানার (Kharagpur Local Police Station) অধীন সাদাতপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ (সুকদেব মাইতি)। তাঁর এই কুকীর্তির অভিযোগ অবশ্য নিতে চায়নি খড়্গপুর গ্রামীণ থানা। পরে মেদিনীপুর জেলা আদালতের দ্বারস্থ হন স্বামীহারা ওই মহিলা। এরপরই নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ। শুক্রবার জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ওই সাব ইন্সপেক্টর (SI)-কে ক্লোজ করা হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

thebengalpost.net
সাদাতপুর ফাঁড়ি :

ঘটনাক্রমে জানা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত সাদাতপুর ফাঁড়িতে গত কয়েকমাস হল ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাব ইন্সপেক্টর সুকদেব মাইতি। অভিযোগ, ফাঁড়িতে (বা, আউট পোস্টে) নতুন এই বড়বাবু আসার পর থেকেই তাঁর আচার-আচরণে সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্ট। গত, সোমবার (২৪ অক্টোবর) অর্থাৎ কালীপুজোর রাতে, সাদাতপুর ফাঁড়িতেও কালী পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। ওই দিন গভীর রাতেই ইনচার্জ সুকদেব মাইতি কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে অষ্টাদশী অনীতা দাস (নাম পরিবর্তিত) ও তাঁর ভাই অমলেশ দাসের (নাম পরিবর্তিত) উপর নির্মম অত্যাচার করেন বলে অভিযোগ! জানা যায়, সাদাতপুর ফাঁড়ির পাশে বছর ৪০ এর রত্না দাসের (নাম পরিবর্তিত) হোটেল থাকার সুবাদে, সাদাতপুর ফাঁড়ির প্রায় সমস্ত পুলিশ কর্মীদের সঙ্গেই তাঁদের চেনাজানা। স্বাভাবিকভাবেই, থানার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন রত্না (নাম পরিবর্তিত) ও তাঁর ছেলেমেয়েরা। কালী পুজোর রাতেও সন্ধ্যে থেকেই ফাঁড়িতে ছিলেন রত্না’র ছেলে-মেয়ে ও তাঁদের দুই বন্ধু। সারাদিন উপোস থেকে তাঁরা কালীপুজোয় অংশ নেন।

thebengalpost.net
অত্যাচারিত কিশোর, কিশোরী:

এদিকে, পূজো শুরু হতে দেরি থাকায় তাঁরা ফাঁড়ির পাশেই নিজেদের হোটেলে বিশ্রাম নিতে যান। অভিযোগ, গভীর রাতে তাঁদের হোটেলে গিয়ে, দরজায় টোকা দেন সাদাতপুর ফাঁড়ির বড়বাবু সুকদেব মাইতি’র নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ কর্মী। এরপর, তাঁদের কোনো কথা শোনার আগেই, দোকান থেকে টেনে বের করে হঠাৎই লাঠিচার্জ করতে শুরু করেন পুলিশ কর্মীরা। বেধড়ক মারধর করা হয় রত্না দাসের (নাম পরিবর্তিত) ছেলে-মেয়ে ও তাঁদের দুই বন্ধুকে। ভাইকে ছাড়াতে গেলে অনীতাকে (নাম পরিবর্তিত) লাথি মেরে ফেলে দেন সুকদেব মাইতি! এমনটাই অভিযোগ। মারধর করার কারণ জানতে চাইলে, আরও মারধর করা হয়। এই ঘটনায় গভীর রাতেই কাঁদতে কাঁদতে কোনো ক্রমে বাড়িতে এসে মাকে সব কথা খুলে বলে দুই ভাই বোন। ঘটনার পরেরদিন অনীতা’র প্রচন্ড পরিমাণে পেটের যন্ত্রণা ও রক্তবমি হওয়ায় বাড়ির লোকেরা তড়িঘড়ি মেয়েকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর, লোকাল থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বলা হয়, বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য। তবে, সুকদেব মাইতি’র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনড় ওই পরিবার শুক্রবার মেদিনীপুর আদালতের শরণাপন্ন হন। ছেলে মেয়ের পাশাপাশি রত্না দেবীর (নাম পরিবর্তিত) অভিযোগ, দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি সাদাতপুর থানায় রান্নার কাজ করেছেন, এর আগে অনেক বড়বাবু (ইনচার্জ) এসেছেন-গেছেন। তবে, কোনোদিন কেউ দুর্ব্যবহার করেননি! শুক্রবার মেদিনীপুর আদালতে দাঁড়িয়ে তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, “কিছুদিন আগে সাদাতপুর থানার ইনচার্জ সুকদেব মাইতি দোকানে চা খেতে গিয়ে আমার হাত ধরে নেয়। আমি সেই সময় কোনক্রমে হাত ছাড়িয়ে দোকানের বাইরে চলে আসি। আমার মনে হয় ওনার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায়, প্রতিশোধ নিতে, ছেলে মেয়েদের এভাবে কোন কারণ ছাড়াই মারধর করা হয়েছে। আমি ওই অফিসারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের এস.পি (জেলা পুলিশ সুপার) দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, “সাদাতপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শুকদেব মাইতিকে ক্লোজ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিজেপি ও সিপিআইএম ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। বিজেপি’র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস জানিয়েছেন, “রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় তৃণমূল আমলের পুলিশ। ওই অফিসারের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। যথাযথ তদন্ত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” অপরদিকে, ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি করে জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার পক্ষপাতি তৃণমূল নয়। পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের যথেষ্ট সম্মান ও স্বাধীনতা দেওয়া হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে। কিন্তু, কেউ যদি ক্ষমতার অপব্যাবহার করেন বা অন্যায় করেন, তিনি নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন।”

thebengalpost.net
সেই হোটেল‌ :

thebengalpost.net
Advertisement: