মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: তাঁর মৃত্যুর ১৬ বছর পর ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৫৭’র মহাবিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ঝাঁসির রানী। তাই আজ-ও তাঁকে স্মরণ করে দেশ। তবে, ইতিহাসে অনেকাংশেই উপেক্ষিত মহাবিদ্রোহের অর্ধ শতাব্দী আগেই বাংলার বুকে ঘটে যাওয়া কৃষক বিদ্রোহে নেতৃত্বদানকারী বীর রমনী। তিনি মেদিনীপুর তথা কর্ণগড়ের রানী শিরোমণি! ১৭৯৮-‘৯৯ খ্রিস্টাব্দে শালবনীর কর্ণগড় থেকে মেদিনীপুর, গড়বেতা, শালবনী, আনন্দপুর প্রভৃতি এলাকার প্রজা তথা কৃষকদের একত্রিত করে দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শিরোমণি। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল ইংরেজরা শিরোমণিকে চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান নেত্রী ঘোষণা করে পরোয়ানা জারি করে। ওই দিন ব্রিটিশ বাহিনী কর্ণগড়ে পৌঁছলে, রাণী গোপন সুড়ঙ্গপথে মেদিনীপুরের আবাসগড় প্রাসাদে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে যান! তাঁকে বন্দি করে কলকাতায় নিয়ে যায় ইংরেজরা। কর্ণগড় প্রাসাদ লুঠ করে ধ্বংস করে দেয় ইংরেজ সৈন্যরা। মুক্তি পাওয়ার পর শিরোমণি আর কর্ণগড়ে ফিরে যাননি। মেদিনীপুরের আবাসগড়ের প্রাসাদে শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন তিনি। ১৮১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর (বাংলা, ২-রা আশ্বিন) আবাসগড়েই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই শিরোমণি’র প্রয়াণের ২১০ বছর পর অর্থাৎ ২১১ তম প্রয়াণ দিবসে তাঁর পূর্ণাবয়ব মূর্তি উন্মোচিত হলো শালবনীর কর্ণগড় সংলগ্ন কুতুরিয়া জুনিয়র হাই স্কুল প্রাঙ্গণে।

thebengalpost.net
কুতুরিয়া জুনিয়র হাই স্কুল প্রাঙ্গণে শিরোমণি’র মূর্তি উন্মোচন:

সোমবার এই মূর্তির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন করলেন জেলাশাসক আয়েশা রানী এ। ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র, নেপাল সিংহ, কণিকা মাণ্ডি, শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিনু কোয়াড়ি, কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহ, ঊষা কুন্ডু প্রমুখ। এছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিক বৃন্দ। ছিলেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, সমাজকর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব-রাও। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেদিনীপুর সংলগ্ন শালবনীর কর্ণগড় থেকেই কৃষক বিদ্রোহ বা (দ্বিতীয়) চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-‘৯৯) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রানী। ঐতিহাসিকদের অনেকের মতেই, রানী শিরোমণি শুধু চুয়াড় বিদ্রোহ বা কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেননি, তিনিই প্রথম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ‘বন্দিনী’ হয়েছিলেন। শিরোমণি-কে তাই অনেকেই পরাধীন ভারতবর্ষের প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী বলে থাকেন।

thebengalpost.net
অনুষ্ঠানে জেলাশাসক:

তাঁর প্রয়াণের ২১০ বছর পর তাঁকে অনন্য সম্মান জানানো হলো, শালবনীর কুতুরিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের পক্ষ থেকে। আজ, বাংলা ২-রা আশ্বিন (ইংরেজি ১৯ সেপ্টেম্বর), রানী শিরোমণি’র মৃত্যুদিবসেই উন্মোচিত হল তাঁর প্রথম পূর্ণাবয়ব মূর্তি। এই কর্মকাণ্ডের যুগ্ম সম্পাদক তথা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুনাংশু দে জানিয়েছেন, “আর্কাইভ অবলম্বনে রানী শিরোমণি’র মূর্তি নির্মাণ করেছেন বিখ্যাত শিল্পীরা। পরাধীন ভারতবর্ষের সম্ভাব্য প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী-কে এভাবেই আমরা স্বীকৃতি জানালাম। এখান থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত তাঁর স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক কর্ণগড়। এবার, এই স্কুলের নাম-ও রানী শিরোমণি’র নামাঙ্কিত করার বিষয়টি নিয়ে আমারা এগোচ্ছি।”

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):