দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ মার্চ: চোর সন্দেহে রাতভর চললো গণপিটুনি। আর, তাতেই মৃত্যু হল বছর ৩০ এর এক যুবকের! এই নির্মম ঘটনা-টি শান্তি, শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি আর সহাবস্থানের শহর মেদিনীপুরের। মঙ্গলবার সাত সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের তোড়াপাড়া এলাকা থেকে ওই মৃত যুবকের দেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালী থানার পুলিশ। মৃত যুবকের নাম শেখ পল্টু (৩০)। তার বাড়ি শহরের ধর্মা এলাকায়। পরিবারের অভিযোগ, চোর সন্দেহে পল্টু-কে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে! পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই যুবক টোটোর ব্যাটারি চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়! তারপরই তাকে লাইট পোস্টে বেঁধে গণপিটুনি দেওয়া হয়। তাতেই যুবকের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সাইকেল ও নাইলনের ব্যাগ। জেলা পুলিশের নেতৃত্বে ঘটনার তদন্তে নেমে কোতোয়ালী থানা ইতিমধ্যে ৫ জনকে আটক করেছে ওই এলাকা থেকে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গণপিটুনির কথা শিকারও করেছে। তাদের গ্রেফতার করে আগামীকাল আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এদিকে, চোর সন্দেহে হোক কিংবা হাতেনাতে চোরকে ধরাই হোক, গণপিটুনির ফলেই যে মৃত্যু হয়েছে, সেই বিষয়টি ক্রমেই নিশ্চিত হচ্ছে এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও তা উঠে আসছে! আর এক্ষেত্রে শহরের প্রবীণ নাগরিক তথা সচেতন এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, গত প্রায় ২০ বছরে এরকম ঘটনা ঘটেনি মেদিনীপুর শহরে। ২০-২২ বছর আগে বাম আমলে শহরের উপকণ্ঠে সদর ব্লকের গোপগড় এলাকায় জনরোষে একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বলে তাঁরা জানাচ্ছেন। মৃত ব্যক্তির নাম ছিল শ্রীরাম পান্ডে! সূত্রের খবর অনুযায়ী, সেই মামলা নাকি এখনও চলছে। তারপর থেকে মেদিনীপুর শহরে জনরোষে বা গণপিটুনিতে মৃত্যু’র ঘটনা ঘটেনি বলেই শহরবাসী জানাচ্ছেন।
এদিকে, এই ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়েছে মেদিনীপুর শহরের ওই এলাকাটি। জানা গেছে, শেখ পল্টুর শ্বশুরবাড়ি শহরের বড় আস্তানা সংলগ্ন মিঠু মসজিদ এলাকায়। বাড়ি ধর্মাতে হলেও, ওই এলাকাতেই পল্টু বেশিরভাগ সময় থাকতে বলে জানা গেছে। মিস্ত্রি থেকে শ্রমিক, যখন যা কাজ পেত তাই করত। তবে, ইদানিং নানা ধরনের নেশা ব ড্রাগ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল বলেও জানা গেছে। অন্যদিকে, তোড়াপাড়ার ওই এলাকাতে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি টোটোর ব্যাটারি চুরি হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানাচ্ছেন। সোমবার গভীর রাতে পল্টু নাকি ব্যাটারি চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়। তারপরই তাকে ল্যাম্পোস্টে বেঁধে গণপ্রহার দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর, তাতেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে তার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পল্টুর সারা শরীরে ক্ষতচিহ্ন বা মারের দাগ ছিল বলে জানা গেছে! বিবাহিত ওই যুবকের একটি ছেলে এবং একটি মেয়েও আছে। এদিকে, ঘটনার পর বড় আস্তানা’য় তৈরি হয় উত্তেজনা! অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লান কুসুম ঘোষের নেতৃত্বে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পল্টুর আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা পুলিশকে ঘিরে তীব্র বিক্ষোভ দেখিয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে, ৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। জেলা পুলিশের নেতৃত্বে চলছে তদন্ত।