দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ জানুয়ারি: বড়সড় সাফল্য পুলিশের! অভিযুক্ত ট্রাক চালককে বীরভূম থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি (সোমবার) সাত সকালেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থানার অন্তর্গত উকুনমারি (মকরামপুর সংলগ্ন) এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর। গৌতম মুখার্জি নামে বছর ৬৩’র এক গ্রামীণ চিকিৎসককে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে পিষে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল এক ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে। বেপরোয়া ট্রাক চালানোর প্রতিবাদ করায়, ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির (খড়্গপুর শহরের আদি বাসিন্দা) ওই চিকিৎসকের উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে নিয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে। জাতীয় সড়কের উপর থাকা একাধিক সিসিটিভি (CCTV) ফুটেজ এবং নিহত চিকিৎসকের পরিবারের তুলে রাখা ট্রাকের ছবি খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করেছিল নারায়ণগড় থানার পুলিশ। অভিযুক্ত ট্রাক চালকের খোঁজে চলছিল তল্লাশি। অবশেষে সাফল্য পেল নারায়ণগড় থানা তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) গভীর রাতে বীরভূম জেলার সদাইপুর এলাকা থেকে ওই ট্রাক চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিজের শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপন করেছিল ওই ট্রাক চালক। মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে।

thebengalpost.net
গ্রেফতার হওয়া ট্রাক চালক:

যদিও, তদন্তের স্বার্থে তার নাম-পরিচয় গোপন রেখেছে পুলিশ। আজ, শুক্রবার তাকে খড়্গপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২৩ জানুয়ারি, সোমবার ভোর থেকেই জেলা জুড়ে ঘন কুয়াশার দাপট ছিল। তার মধ্যেই কাকভোরে দীঘার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল খড়্গপুরের ওই মুখার্জি পরিবার (যদিও পেশাগত কারণে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়িতে থাকতেন বলে জানা যায়)। চিকিৎসক গৌতম মুখার্জি এবং তাঁর স্ত্রী সহ পাঁচ জন ছিলেন নিজেদের মারুতি ৮০০ গাড়িতে। ৬০ নং জাতীয় সড়কে একটি ট্রাক তাঁদের প্রাইভেট কারকে ওভারটেক করতে গেলে প্রাইভেট কারের সামনের অংশে বিপজ্জনকভাবে ধাক্কা লাগে। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর উকুনমারির কাছে (নারায়ণগড় থানার অন্তর্গত) এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর প্রাইভেট কারের যাত্রীরা নেমে ওই লরি চালককে আটকে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর লরি চালক লরি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে চিকিৎসক গৌতম মুখার্জি লরি বা ট্রাক’টির সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে আটকাতে যান। তখনই তাঁর ওপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ওই ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে! ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে যান চিকিৎসক গৌতম মুখার্জি (৬৩)। ঘটনায় আহত হন ওই পরিবারের আরো দু’জন। গৌতম বাবু’র স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁর স্বামীর উপর দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাক চালিয়ে নিয়ে চলে যায় ওই ট্রাক চালক। এরপরই তদন্ত নেমে অভিযুক্ত ট্রাক চালককে বীরভূম জেলার সদাইপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও, শুক্রবার সকালে অভিযুক্ত ট্রাক চালক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে! তার দাবি, ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু, ওই পরিবার তা বুঝতে চায়নি। তাকে বেল্ট দিয়ে মারধর করা হয়েছিল। এরপর, নিজেকে বাঁচাতে সে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় ট্রাক ধরে ওই চিকিৎসক ঝুলে পড়েছিল! তাতেই দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও, ট্রাক চালকের এই দাবি যে ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’, তা জানিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা। তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুলিশের তরফে।