দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৮ আগস্ট: গতকালই ৮৪তম ‘কবি প্রয়াণ’ (২২শে শ্রাবণ/৭ আগস্ট) পালিত হয়েছে বাংলা তথা দেশ জুড়ে। ঠিক তার পরদিনই (২৩শে শ্রাবণ/৮ আগস্ট) সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে ‘বিদায়’ নিলেন বঙ্গ-রাজনীতির ব্যতিক্রমী ‘নক্ষত্র’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (১ মার্চ, ১৯৪৪ – ৮ আগস্ট, ২০২৪)। নিজের প্রিয় পাম অ্যাভিনিউ-র দু’কামরা ঘরেই নিঃশব্দে বিদায় নিয়েছেন বঙ্গ রাজনীতির ‘শ্বেতশুভ্র’ এই ব্যক্তিত্ব! বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বা ‘কিশোর কবি’ সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্র-ই যাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; একাধারে কবি, সাহিত্যিক, বাচিক শিল্পী থেকে সংস্কৃতিমনস্ক এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক চরিত্র হিসেবে যাঁর পরিচিতি দলমত নির্বিশেষে শিক্ষিত, সচেতন বাঙালির মনের মণিকোঠায়। ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি কেন্দ্র সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’-র জন্য মনোনীত করলেও, বিনয়ের সাথে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রাজনীতি-সচেতন লক্ষ লক্ষ মানুষ!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বুধবার রাতে বুদ্ধদেবের শ্বাসকষ্ট বেশ বেড়ে গিয়েছিল। তবে, কোনোমতে তা সামাল দেওয়া হয়েছিল। তখনই ঠিক করা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ উডল্যান্ডসের চিকিৎসকেরা এসে তাঁকে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে। কারণ, নিজেকে ‘স্বেচ্ছা-বন্দী’ করে নেওয়া এই মানুষটির হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়টিতে প্রবল অনীহা ছিল! তাই, চিকিসকদের পরামর্শের কথা ভাবা হয়েছিল। সেই মতোই বিষয়টি এগোচ্ছিল। তবে, সেই সময়টুকুও বোধহয় আর দিতে চাননি ব্যতিক্রমী বুদ্ধ! বৃহস্পতিবার সকালে উঠে প্রাতঃরাশের পর চা-ও খেয়েছিলেন। তার পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নেবুলাইজ়ার দেওয়ার চেষ্টা হয়। সূত্রের খবর, সেই সময়েই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয় দ্রুত। তাঁরা এসে বুদ্ধদেবকে প্রয়াত ঘোষণা করেন। তাঁর প্রিয় রবি কবি’র মতোই ৮০ বছর বয়সে ইহলোক-কে বিদায় জানালেন বুদ্ধদেব। রেখে গেলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য, একমাত্র সন্তান সুচেতনা ভট্টাচার্য (সুচেতন ভট্টাচার্য) সহ ‘অনুরাগী ও অনুগামী’ লক্ষ লক্ষ পাটিকর্মী ও সমর্থকদের!
২০০০ সালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু শারীরিক কারণে ইস্তফা দেওয়ার পর উপমুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব-ই অস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। এরপর, ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন বুদ্ধদেব। তিনি চলতে চেয়েছিলেন কৃষি ও শিল্পকে একসাথে নিয়ে। বাংলার কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে বনধের (ধর্মঘটের) রাজনীতি ‘বন্ধ’ করতে চেয়েছিলেন; স্লোগান দিয়েছিলেন ‘ডু ইট নাও’ (Do it now)। সিপিআইএমের ‘প্রাক্তন’ পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব একথা বলতেও দ্বিধাবোধ করেননি, ” দুর্ভাগ্যবশত আমি নিজেও এমন একটা রাজনৈতিক দল করি, যাঁরা বনধ ডাকে।” এসব নিয়েই ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধে’র সাথে বামফ্রন্টের বিরোধ বেধেছে বারবার। তবুও, বাংলার যুব প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যে ‘অনড়’ থেকেছেন বারবার। ২০০৬ সালে বাংলার মানুষও দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করেছিলেন তাঁকে। তুলে দিয়েছিলেন ২৩৫টি আসন।
আর, তারপর থেকেই, বিশেষত সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠার সময় থেকেই ‘স্বপ্নভঙ্গ’ হওয়া শুরু হয়েছিল বুদ্ধদেবের! তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনড়’ আন্দোলনে টাটারা বিদায় নিয়েছিলেন। এরপর, নন্দীগ্রাম আর নেতাইয়ের মধ্য দিয়ে বুদ্ধদেব জমানার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেওয়া হয় বলে মানেন রাজনৈতিক সমালোচকেরা! তাঁদের মতে, বুদ্ধদেবের ১১ বছরের শাসনকালের, শেষ পাঁচ বছর বঙ্গ-রাজনীতি নানা দিক থেকেই সরগরম হয়েছিল। এই রাজনৈতিক উত্তাপের গোটাটাই ছিল তাঁর শিল্পায়ন-নীতিকে ঘিরে। যে শিল্পায়নকে বুদ্ধদেব বাজি ধরেছিলেন, সেই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতিই বুদ্ধদেবের পায়ের তলার জমি সরিয়ে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে ২৩৫ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরা মুখ্যমন্ত্রীকে পাঁচ বছর পরই শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে অবসান হয় সাড়ে ৩৪ বছরের একটানা বাম শাসনের। আর, তার পর থেকেই নিজেকে ‘অন্তরালে’ সরিয়ে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। সিওপিডি (COPD) আর চোখের গুরুতর (কর্নিয়ার) সমস্যা সত্ত্বেও, ভিন রাজ্যে কিংবা বিদেশে চিকিৎসা করাতে রাজি হননি কখনও। নিজের দল (পার্টি) কিংবা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবেও সাড়া দেননি বুদ্ধ। পাম অ্যাভিনিউ-র অন্ধকার ঘরেই নিজের সাহিত্য আর শিল্পীসত্ত্বাকে আঁকড়ে নীরবে কাটিয়ে দিয়েছেন গত প্রায় এক দশক। এর মাঝে একাধিকবার অসুস্থ হয়েছেন। ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে (উডল্যান্ডসে)। সস্ত্রীক করোনা আক্রান্তও হয়েছিলেন ২০২১ সালের মে মাসে। তবে, ‘সুস্থ’ হয়ে ফিরেও গিয়েছেন। শেষ বার তীব্র ‘শ্বাসকষ্ট’ নিয়ে গত বছর (২০২৩) ২৯ জুলাই উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ৯ আগস্ট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ঠিক তার এক বছরের মাথায়, কাউকে কোন সুযোগ না দিয়েই ‘নিঃশব্দে’ বিদায় নিলেন বঙ্গ-রাজনীতির এক অন্যতম উজ্জ্বল ‘নক্ষত্র’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অবসান হল এক ‘ব্যতিক্রমী’ রাজনৈতিক অধ্যায়ের! (সম্পাদনা- মণিরাজ ঘোষ।)
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২২ নভেম্বর: আইআইটি (IIT)-র মতো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে অভাব…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ নভেম্বর: দোকান বন্ধ করে রাতেই বেরিয়েছিলেন বাইক নিয়ে।…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…